ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালদায় মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কমিটি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০২৪
হালদায় মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে কমিটি ...

চট্টগ্রাম: প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণের স্বার্থে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করতেন। কিন্তু হঠাৎ এ অভিযানে ভাটা পড়েছে।

ফলে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু চক্র।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হালদা নদীর বেশ কয়েকটি অংশে নিয়মিত বড়শি দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে।

অনেক মাছ মুখে বড়শি নিয়ে ছুটে যাচ্ছে। যার কারণে মুখে আঘাত পেয়ে মা মাছ মারা যাচ্ছে। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছিপাতলী ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাশে পূর্ব মোয়াজ্জেম চৌধুরী বাড়ির টেক, ছিপাতলী ৩ নম্বর ওয়ার্ড আলমের কুম, উত্তর মেখল পুরাতন নাপিতের ঘাটায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। এছাড়া হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ দিয়েও মাছ শিকারের অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নদীতে পতিত হওয়ার কারণেও মা মাছ মারা যাচ্ছে।  

গত ১০ দিনে হালদা থেকে পাঁচটি বড় মা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া মৃত অবস্থায় ভেসে আসা একটি ডলফিন উদ্ধার হয়েছে। হঠাৎ করে এত মাছ মারা যাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতর।

রোববার (৩০ জুন) দুপুরে হালদা নদীর রাউজান উপজেলা অংশে পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মরা কাতলা মাছ ভেসে আসে। দেখতে পেয়ে স্থানীয় একজন মৎস্যজীবী সেটি উদ্ধার করে নিজের নৌকায় তুলে ডাঙায় নেন। এরপর তিনি উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও হালদা নদী গবেষণা টিমকে খবর দেন। মৃত কাতলা মাছটির ওজন প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম। দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার।

এর আগে শুক্রবার (২৮ জুন) হালদা নদীর হাটহাজারী উপজেলা অংশে উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকায় দুটি কাতলা মাছ মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মাছ দুটির মধ্যে একটি সাড়ে ১২ কেজি ও অন্যটি ১০ কেজি ওজনের। ১০ কেজি ওজনের মা মাছটি পচে যাওয়ায় সেটি মাটি চাপা দেওয়া হয়। মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের কাতলা মাছটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষণের জন্য নেওয়া হয়।

এছাড়া বুধবার (২৬ জুন) রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের বাকের আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় নদী থেকে একটি ১০ কেজি ওজনের মৃত রুই মাছ উদ্ধারের পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে সেটি মাটি চাপা দেওয়া হয়। এক সপ্তাহ আগেও একইঘাট থেকে আরেকটি মৃত কাতলা মাছ উদ্ধার করে ডাঙায় মাটিচাপা দেওয়া হয়।

প্রায় দেড় বছর পর হালদা নদী থেকে একটি মৃত ডলফিনও উদ্ধার হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা এলাকায় নদীতে ভেসে আসা প্রায় ৯০ কেজি ওজনের মৃত ডলফিনটিকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এরপর সেটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও বেসরকারি সংস্থা আইডিএফ এর সহযোগিতায় নদীর পাড়ে আইডিএফ হ্যাচারি এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া হয়।

হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, দশদিনে পাঁচটি মা মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু অবশ্যই অস্বাভাবিক বিষয়। নদীর পরিবেশের অবস্থা যে মারাত্মক, এটা আর বুঝার বাকি নেই। দূষণের কারণে একের পর এক মাছ মারা যাচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। এরপরেও আমরা গবেষণা করে দেখবো।  

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য বিভাগ মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক মহিবুল্লাহকে প্রধান করে কমিটিতে মৎস্য বিভাগের আরও চার কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। হালদা নদীতে দূষণকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আরও কারণ থাকতে পারে। বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে কি না, ব্যাকটেরিয়াল কোনো ডিজিজের কারণে শ্বাসকষ্টে মাছের মৃত্যু হচ্ছে কি না কিংবা বয়সের কারণে সেগুলো মারা যাচ্ছে কি না-এসব বিষয় কমিটি অনুসন্ধান করে দেখবে।

পরিবেশ অধিদফতর থেকেও পাঁচ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে মাছের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান, দূষণ শনাক্ত হলে উৎস খুঁজে বের করা এবং প্রতিরোধে সুপারিশ উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মহানগর ও জেলা কার্যালয়ের পাঁচজন টেকনিক্যাল পারসনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হালদা নদীর পানি সংগ্রহ করে সেটা ল্যাবে টেস্ট করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২৪ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।