চট্টগ্রাম: দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। হিমেল হাওয়া, কুয়াশা যত বাড়বে পাল্লা দিয়ে বাড়বে গরম কাপড়ের চাহিদা।
সরেজমিন খাতুনগঞ্জে এমন চিত্র দেখা গেছে রোববার (১ ডিসেম্বর)।
পাইকাররা জানান, খাতুনগঞ্জে শতাধিক পুরাতন কাপড়ের গাইটের পাইকারি দোকান রয়েছে। প্রায় তিন হাজার আমদানিকারকের বরাদ্দের বিপরীতে চীন, কোরিয়া, তাইওয়ান, জাপান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আসে এসব পুরোনো কাপড়। একেকটি গাইটের ওজন ৪০ থেকে ৮০ কেজি। শত শত গাইটের স্তূপের মধ্যে মার্কা দেখেই ক্রেতা-বিক্রেতারা বোঝেন কী ধরনের পোশাক আছে। তাইওয়ানের টিয়া পাখি, ত্রিপল এ বা তিন টেক্কা, ত্রিপল নাইন, হলুদ চট, চীনা এলজি, ত্রিপল সেভেন, ত্রিপল এইট, মেগা, কোরিয়ার ত্রিপল ফাইভ ইত্যাদি মার্কা রয়েছে। বলা যায় এগুলো ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাংকেতিক ভাষা।
এসব কাপড় দিয়ে দেশের নিম্নবিত্ত থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ শীত নিবারণ করে। একটু উষ্ণতার জন্য ফ্যাশন সচেতন অনেক মধ্যবিত্ত শ্রেণির তরুণ-তরুণীদেরও আমদানি করা পুরোনো গাইটের কাপড় কিনতে বা পরতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিক্রেতা জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও জ্যাকেট আর সোয়েটারের গাইট বেশি চলছে। রপ্তানিকারক দেশের কোড, মার্কা, ওজন ও মান ভেদে প্রতি গাইট ৬-১৫ হাজার টাকা। এরপর চাহিদা বেশি বেবিস্যুটের। একেকটি বেবিস্যুটের গাইট ৬-১০ হাজার টাকা।
তিনি জানান, একটি গাইটে ৮০-১০০ পিস জ্যাকেট থাকে। ক্রেতার ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে কতটি পোশাক থাকবে। অনেক সময় গাইটে হুক মারার কারণে লেদার জ্যাকেট, কম্বল ইত্যাদি নষ্টও হয়। তারপরও খুচরা বিক্রেতারা লাভ করেন, শীত মৌসুমে পুরোনো কাপড় বেচে সংসার চালান।
আরেকজন পাইকার জানান, অনেক তরুণ-তরুণী শীতবস্ত্র বিতরণ করতেও গাইট কিনতে আসেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক খুচরা বিক্রেতা মোবাইল ফোনে অর্ডার দেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা পাঠিয়ে দেন। আমরা শুধু পার্সেল সার্ভিসের বুথে গিয়ে বুকিং করে দিই। খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে কেনার পর প্রতি গাইটে লেবার খরচ বাবদ ৪০ টাকা দিতে হয়। পাইকাররা মাঝিরঘাট থেকে প্রতিটি গাইট খাতুনগঞ্জে আনতে লেবার ও গাড়িভাড়া বাবদ ১২০ টাকা খরচ পড়ে।
পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরের এসএম জলিল বাংলানিউজকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সারা দেশের ৩ হাজার আমদানিকারক পুরাতন কাপড় আমদানি করেন। বিভিন্ন জেলায় গুদাম না থাকায় বেশিরভাগ গাইট চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট ও আশপাশের গুদামে রাখা হয়। এতে কোনো আইটেমের চাহিদা কম থাকলে খাতুনগঞ্জের পাইকাররা অন্য জেলায় বিক্রি করে দিতে পারেন। ডলার সংকটসহ নানা কারণে পুরাতন কাপড়ের গাইটের দাম সামান্য বাড়লেও পর্যাপ্ত কাপড় মজুদ রয়েছে। বেচাকেনাও ক্রমে বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি