ঢাকা, শুক্রবার, ৩ আশ্বিন ১৪৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাবেক মন্ত্রীর অর্থপাচারের দুই ‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রেপ্তার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:০৬, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫
সাবেক মন্ত্রীর অর্থপাচারের দুই ‘মাস্টারমাইন্ড’ গ্রেপ্তার ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  

তারা হলেন-আরামিট পিএলসি’র এজিএম উৎপল পাল ও আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম আব্দুল আজিজ।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ পরিচালক সুবেল আহমেদ।

আদালত সূত্রে জানা যায়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে সম্পদ তৈরির কাজ ও রক্ষণাবেক্ষণে আরামিট গ্রুপের দুই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত ছিলেন। উৎপল পাল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ তৈরি ও দেখাশোনার কাজ করতেন। সম্প্রতি তার কাছ থেকে জব্দ করা দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোন থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য উদ্ধার করা হয়। এসব ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। উৎপল দুবাই, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচারের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে কাজ করেছেন। আরেক কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ যুক্ত ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশি সম্পত্তি কেনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ভাড়া দেওয়ার কার্যক্রমে।  

গত ২৪ জুলাই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী ও ভাইবোনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।  

মামলার আসামিরা হলেন- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী ও ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী (৪৬) ও বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬), ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ (৫৫), আফরোজা জামান (৪৮), সৈয়দ কামরুজ্জামান (৬১), মো. শাহ আলম (৬২), মো. জোনাইদ শফিক (৬৪), অপরূপ চৌধুরী (৬৫), তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান (৬৬), ইউনুছ আহমদ (৭৯), হাজী আবু কালাম (৭৯), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (৬২), সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর (৭৭) ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী (৬৪)। ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন- মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ (৫১), আবদুল হামিদ চৌধুরী (৫০), আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান (৪৬), মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল (৫৮), মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন (৬২) ও বজল আহমেদ বাবুল (৫৬)।

জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন- মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী (৫১), কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম (৬৬), মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম (৫০), আব্দুল আজিজ (৩৯), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৫৪), মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী (৪৮), ইয়াছিনুর রহমান (৪৩), ইউছুফ চৌধুরী (৪৫) ও সাইফুল ইসলাম (৪৫)।  

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে খুলে দেওয়া হয় পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান-ভিশন ট্রেডিং, আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং। এরপর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখায় এসব প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার টাইম লোন অনুমোদন করানো হয়। ব্যাংকের নিজস্ব ক্রেডিট কমিটির ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ উপেক্ষা করে ২০২০ সালের ৮ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ ওই ঋণ অনুমোদন দেয়। এরপর সেই টাকা ভাগ করে একই ব্যাংকে খোলা চারটি হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করে পাচার করা হয়। ব্যাংক পরিচালক, ঋণ আবেদনকারী এবং অনুমোদনকারী সবাই একে অপরের আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমন্বিত চক্রান্তের মাধ্যমেই এ লোন নেওয়া ও টাকা পাচার সম্ভব হয়।  

ইউসিবিএল ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল। নেতিবাচকব প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের টাকাগুলো নাম সর্বস্ব চারটি প্রতিষ্ঠান আলফা ট্রেডার্স, ক্লাসিক ট্রেডার্স, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। পরে নগদে উত্তোলন করা হয়।  

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, টাকা স্থানান্তর করা এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আরামিট গ্রুপের কর্মচারি। টাকা নগদে উত্তোলনের পর উত্তোলনকারী আরামিট গ্রুপের কর্মচারীরা পে অর্ডার, ভাউচারের মাধ্যমে ইউসিবিএল ব্যাংকের বহদ্দারহাট শাখায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের হিসেবে বিভিন্ন সময়ে প্রদান করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪০৯, ৪২০, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু’র ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন।

গত বছরের ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। তার বিরুদ্ধে দেশ থেকে অর্থপাচার করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কেনার অভিযোগ উঠে।  

এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।