ঢাকা, শুক্রবার, ১১ আশ্বিন ১৪৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মন্দির-মণ্ডপ সাজছে প্রতিমায়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৯, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫
মন্দির-মণ্ডপ সাজছে প্রতিমায় ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: শিশির ভেজা ভোর নেই, হারিয়ে গেছে শিউলি ফুলের সমারোহ। আকাশে এখনও মাঝে মাঝে কালো মেঘের ভিড়।

তবুও শরতের দুর্গোৎসব এসেছে, মন্দির-মণ্ডপ সাজছে প্রতিমায়। মাস দুয়েক নির্ঘুম রাত জেগে প্রতিমালয়গুলোর মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা শেষ হতে চলেছে।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পঞ্চমী তিথিতে সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) পূর্বাহ্ন ৯টা ১৬ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ, সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সপ্তমী তিথিতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে নবপত্রিকা স্নান ও স্থাপন করা হবে। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অষ্টমী সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত। সকাল ৭টার মধ্যে মহাষ্টমীবিহিত পূজা ও ৮টা ২৯ মিনিট থেকে ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি। বিকাল ৫টা ৪৩ মিনিট থেকে ৬টা ৭ মিনিট পর্যন্ত চলবে সন্ধি পূজা। ৬টা ৩১ মিনিটে বলিদান ও সন্ধি পূজা সমাপন হবে।  

বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর মহানবমী পূজা, ১০টা ১৫ মিনিট থেকে বেলা ১২টা ২৯ মিনিটের মধ্যে কুমারী পূজা, বলিদান, হোম কর্মাদি হবে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে সকাল ৯টা ২৮ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর দশমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে।  

পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানায় ২৯২টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলার ১৫ থানায় সর্বজনীন দুর্গাপূজা মণ্ডপের সংখ্যা ১ হাজার ৬১৪টি। এর মধ্যে প্রতিমা পূজা ১ হাজার ৫৮৫টি এবং ঘটপূজা ২৯টি। প্রতিমা পূজামণ্ডপের মধ্যে ৯৫০টি স্থায়ী ও ৬৬৪টি অস্থায়ী।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার ৩৫৬টি পূজামণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৭১৬টিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৪০টি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বিজয়া দশমীর দিন বিসর্জন হবে প্রায় ২ হাজার প্রতিমা।  

নগরের পূজামণ্ডপগুলো এরইমধ্যে সাজছে নানান রঙে। আয়োজকরা নানান ভাবনায় সাজাচ্ছেন প্রতিমা। হাজারী লেইনের এ বছরের শারদ উৎসবের ভাবনা  ‘কল্কি’,  কোতোয়ালী ষোড়শীকুঞ্জ সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের ভাবনা ‘আড়াল’, সতীশ বাবু লেইন পূজা পরিষদের থিম ‘তুমি আসবে বলে’, খলিফাপট্টি সর্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের থিম ‘অন্তরাগ’ রাজাপুর লেইন পূজা উদযাপন পরিষদের থিম ‘যত মত তত পথ’, ফিরিঙ্গি বাজার শ্রীশ্রী শ্মশানেশ্বর শিব বিগ্রহ মন্দির পূজা পরিষদের থিম ‘দ্বারকা’, দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ১নং সাইট সর্বজনীন দাশপাড়া কালীমাতা বিগ্রহ মন্দিরে পূজার ভাবনা ‘মুক্ত মনন’, হালিশহর নাথপাড়া নিশি মহাজনের বাড়ির পূজার ভাবনা ‘দশভুজা’, পতেঙ্গা শ্যামা সংঘের পূজার থিম ‘ধ্বংসের মেঘে শান্তির ঘুড়ি’, গোসাইলডাঙা গোকুলেশ্বর ধামের পূজার থিম ‘বিশ্বজননী’ এবং বারোয়ারী পূজা কমিটির থিম ‘ঈশ্বর’।  

৭৮তম বর্ষে দক্ষিণ নালাপাড়া শারদ উৎসবের থিম ‘ছৌকলায় লঙ্কাকাণ্ড’ ১ নম্বর এনায়েতবাজার পূজা পরিষদের থিম ‘চালচিত্র’, ৬৯ বর্ষে ঘাটফরহাদবেগ পূজা পরিষদের থিম ‘কাঠ পুতলি’, আদি গঙ্গাবাড়ি পূজা পরিষদের থিম ‘গোলকধাঁধা’, পাথরঘাটা কলাবাগিচা পূজা পরিষদের থিম ‘শারদোৎসব-যুগে যুগে আবর্তন, হবে কি পরিবর্তন’, লালদিঘির পাড় নবগ্রহ বাড়ির পূজার ভাবনা ‘অষ্টমী’, জেএমসেন লেইন পূজা পরিষদের থিম ‘শান্তির খোঁজে সন্ধানী’, আকবরশাহ রক্ষা কালীবাড়ি পূজা পরিষদের থিম ‘দৃষ্টি প্রদীপ’। এছাড়া বিচিত্র সব নামে বিভিন্ন মণ্ডপে সাজানো হচ্ছে প্রতিমা।

নগরের দেওয়ানজী পুকুর পাড়ের রূপশ্রী শিল্পালয়, হাজারী লেনের মহামায়া স্টুডিও, সদরঘাটের লোকনাথ শিল্পালয়, নটরাজ শিল্পালয়, দুলাল পাল প্রতিমালয় থেকে মণ্ডপে পাঠানো হচ্ছে প্রতিমা। এনায়েত বাজার গোয়ালপাড়ার মৃৎশিল্পী বিশ্বজিত পাল বলেন, ‘আষাঢ়ের শুরু থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৪টি মণ্ডপের জন্য প্রতিমা তৈরি করেছি, এখন পাঠাচ্ছি’।

শাস্ত্রবিদ পণ্ডিত অমল চক্রবর্তী বলেন, দেবী দুর্গার বাম পাশে দেবী সরস্বতী ও কার্তিক দেব এবং ডান পাশে দেবী লক্ষ্মী ও শ্রীশ্রী গণেশ দেবতার অধিষ্ঠান। মস্তকোপরে থাকেন মহাদেব। গণেশ প্রতিমার পাশে থাকেন ‘কলা বউ’। এই কলা বউ গণেশ ঠাকুরের বউ নয়, প্রকৃত নাম নবপত্রিকা। ওপরে দেখে শুধু কলাগাছ মনে হলেও এটি প্রস্তুত হয় মোট নয়টি গাছের সহাবস্থানে। আবার মার্কণ্ডেয় চণ্ডী, কালিকাপুরাণ, ভাগবৎপুরাণের মত উৎসে উল্লেখ আছে, লক্ষ্মী এবং সরস্বতী বৈদিক দেবী। তাঁরা মা দুর্গার কন্যা নন।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জি বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পূজা মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক এবং শৃঙ্খলার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় মজুমদার দোলন বলেন, পূজার ছুটি দুইদিন হওয়ায় আনন্দের মাত্রা বেড়েছে। মণ্ডপের নিরাপত্তায় প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছি।

২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী পক্ষ, জানানো হয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আসার আহ্বান। এবার দেবী ধরায় আসছেন গজ (হাতি) বাহনে। এর ফলে ধরণী হবে শস্যপূর্ণ। ২ অক্টোবর দেবীর গমন দোলায়।  

এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।