চট্টগ্রাম: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক মাদকসংক্রান্ত তালিকায় শীর্ষে ছিলেন কক্সবাজারের ইয়াবা ডন খ্যাত সাইফুল করিম। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় চালান এনে বাংলাদেশে বাজারজাত করতেন তিনি।
এর আগে দীর্ঘদিন কক্সবাজার জেলার শীর্ষ করদাতা হিসেবে সিআইপি (ব্যবসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) স্বীকৃতি পান সাইফুল করিম।
নগরের ইসলামী ব্যাংকের ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সাইফুল করিমের প্রতিষ্ঠান মেসার্স হানিফ ইন্টারন্যাশনালের নামে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩১ টাকা। এ পাওনা আদায়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বন্ধক রাখা জমি ও ভবন বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামী ব্যাংক।
গত ৭ অক্টোবর পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক মেসার্স হানিফ ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। এই ঋণের জামানত হিসেবে কক্সবাজারের টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর থানা এলাকায় এবং নগরের কোতোয়ালী এলাকায় মোট ৭২ দশমিক ১৬ শতক জমি, ফ্ল্যাট ও দোকান ভবন বন্ধক রাখা হয়েছিল।
সম্পত্তিগুলো ২০১২ ও ২০১৪ সালে নিবন্ধিত কবলামূলে ব্যাংকে মর্টগেজ করেন সাইফুল করিম। নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে তাঁকে ‘মরহুম’ উল্লেখ করে বলা হয়, ২৯ অক্টোবর দুপুর ২টার মধ্যে দরপত্র জমা নেওয়া হবে এবং বিকেল ৩টায় দরপত্র খোলা হবে।
ইসলামী ব্যাংক ওআর নিজাম রোড শাখার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসভিপি) মোহাম্মদ সানা উল্লাহ জানান, ঋণ নেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৯ সালে সাইফুল করিম নিহত হওয়ার পর থেকে ব্যাংকের কোনো কিস্তি পরিশোধ হয়নি। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগম ও আত্মীয়দের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের পরও পাওনা আদায় সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যাংক নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি আরও জানান, পাওনা টাকার মধ্যে প্রায় তিন কোটি ৬৮ লাখ টাকা আসল ঋণ, বাকিটা মুনাফা। সব মিলিয়ে বর্তমানে আট কোটিরও বেশি টাকা পাওনা রয়েছে।
এদিকে নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে সাইফুল করিমের ব্যবসায়িক ঠিকানা হিসেবে নগরের ফিরিঙ্গি বাজারের ১২৫ ব্রিজঘাটের এস বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জায়গাটি একটি আবাসিক ফ্ল্যাট। স্থানীয়দের ভাষায়, ওই ভবনটি সালাম ম্যানশন নামে পরিচিত। বাসিন্দারা জানান, এখানে হানিফ ইন্টারন্যাশনাল নামে কোনো অফিস ছিল না।
অন্যদিকে নগরের কাজীর দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট সাইফুল করিমের স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে। নিলামকারী সেজে ফ্ল্যাটে গিয়ে জানা যায়, হামিদা বর্তমানে টেকনাফে আছেন। ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার জানান, তিনি চার বছর ধরে এখানে দায়িত্বে আছেন এবং হামিদা নিয়মিত এই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, নিহত হওয়ার এক মাস আগে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুদক কক্সবাজার কার্যালয় সাইফুল করিমের স্ত্রী হামিদা বেগমের বিরুদ্ধেও মামলা করে। দুদকের উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হামিদা বেগমের বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের ভিআইপি টাওয়ারে তাঁর নামে থাকা ফ্ল্যাটটি ইসলামী ব্যাংকে মর্টগেজ রাখা।
এমআই/টিসি