চট্টগ্রাম: নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের ঘোষণা স্বত্ত্বেও অবরোধের মধ্যে মহাসড়কে গাড়ি নামাননি দূরপাল্লার বাস মালিকরা। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় তারা মহাসড়কে গাড়ি নামাতে সাহস পাচ্ছেন না।
নগরীর বিভিন্ন আন্ত:জেলা টার্মিনাল ঘুরে বড় বড় বাস ও চেয়ারকোচগুলোকে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। চতুর্থ দফা অবরোধ শেষে শুক্রবার সকালে কিছু বাস ছাড়লেও শনিবার ভোর থেকে নগরী ছেড়ে যায়নি কোন দূরপাল্লার বাস।
তবে অবরোধের মধ্যে টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ উপজেলাগুলোতে নিয়মিত মিনিবাস, হিউম্যান হলার স্বাভাবিক চলাচল করছে। এছাড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে চলছে পণ্যবোঝাই ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানও।
গত ১৮ ডিসেম্বর নৌ মন্ত্রী শাজাহান খান হরতাল-অবরোধের মধ্যেও দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। এজন্য প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেবে বলেও মন্ত্রী জানিয়েছিলেন।
আন্ত:জেলা বাস মালিক সমিতির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের তরফে কোন অনুরোধ আমরা পাইনি। একজন মন্ত্রী শুধু বলেছেন। মন্ত্রীর আশ্বাসে আমরা নিরাপদ বোধ করছিনা, সেজন্য আমরা দূরপাল্লার কোন রুটেই বাস নামাইনি। আমরা মন্ত্রীর কথায় গাড়ি নামাব, একটা বাসে আগুন দিলে, ভাংচুর করলে ক্ষতিপূরণ কে দেবে ?
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী যানবাহনকে মহাসড়কে নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা হলেও এ সংক্রান্ত কোন আদেশ, নির্দেশনা চট্টগ্রামে পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসনে পৌঁছেনি। এ অবস্থায় যাত্রীবাহী শত, শত যানবাহনকে কিভাবে নিরাপত্তা দেয়া যাবে, তা নিয়েই অন্ধকারে আছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সুনির্দিষ্ট আদেশ না পাওয়ায় তারা বিষয়টি বিবেচনাতেই নেননি।
নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর) আরেফিন জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, `বাস-চেয়ারকোচের মালিকরা কেউ আমাদের কাছে নিরাপত্তা চাননি। চাইলে সেটা বিবেচনা করতাম। আর দূরপাল্লার কোন বাস তো অবরোধের মধ্যে ছাড়েনা। আমরা নিয়মিত ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানকে নিরাপত্তা দিচ্ছি। `
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লাসহ দেশের ১১৭টি রুটে নিয়মিত যানবাহন ছাড়ে। এর মধ্যে ৭-৮টি রুটে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। নগরীর বিআরটিসি বাস টার্মিনাল, শুভপুর বাস স্ট্যান্ড, কদমতলী বাস স্ট্যান্ড, তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু এলাকা, একে খান মোড়, অলংকার, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব যানবাহন ছেড়ে যায়।
আন্ত:জেলা বাস মালিক সমিতির হিসাব মতে, দেশের ১১৭টি রুটে গত ৬ মাসে নাশকতার কবলে পড়েছে ১৮২টি বড় বাস। এর মধ্যে ১৯টি বাস পুরোপুরি ভস্মীভূত হওয়ায় সেগুলো মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সমিতির দপ্তর সচিব হাজী মনোয়ার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার একদিন অবরোধ থাকেনা। সেদিন একসঙ্গে বেশি করে বাস বিভিন্ন রুটে যায়। একদিনের মধ্যে সেগুলোর আবার ফিরে আসা সম্ভব হয়না। বাসগুলো বিভিন্ন জেলায় আটকে থাকে। সেখান থেকে ফিরে পরের সপ্তাহে।
আন্ত:জেলা বাস মালিক সমিতির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধে আমরা একেবারেই পথে বসে গেছি। অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে গেছি। এরপরও আমরা বাস চালাতে রাজি নই। বাস যদি রাস্তায় না নামাই, অন্তত সম্পদটাতো বাঁচবে। ’
এদিকে অবরোধের মধ্যেও যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য পরিবহনে পুলিশের সহায়তা চাইছে তাদের পণ্য পুলিশ পাহারায় পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে পণ্যবোঝাই পরিবহন সবচেয়ে বেশি চলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।
পাহাড়তলী থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, বন্দর থেকে বের হওয়ার পর পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আমরা রিসিভ করি। পুলিশ পাহারায় সেগুলো আকবর শাহ থানায় হস্তান্তর করা হয়। তারা সীতাকুণ্ড থানাকে হস্তান্তর করে। এভাবে সীতাকুণ্ড থেকে মিরসরাই, ফেনী হয়ে প্রত্যেক থানা পুলিশের সহায়তায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে পণ্যবোঝাই পরিবহন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর।