চট্টগ্রাম: মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্যদের জন্য চাকরি থাকলেও প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা।
বুধবার নগরীর সার্কিট হাউজে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংবর্ধনা সভায় তারা এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের সরকার।
“মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরির অভাব নেই, কিন্তু প্রার্থী পাওয়া যায় না। আমি কিছুদিন আগে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছি, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার থেকে কেউ আবেদন করেনি। পরে, আবার সার্কুলার দিয়ে পাঁচটি পদের পরিবর্তে আবেদন পেয়েছি মাত্র তিনটা। ”
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি আগেও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখেছি, পদ আছে কিন্তু প্রার্থী নেই। পদ শূন্য পড়ে থাকে, নিয়োগ দেওয়ার লোক নেই।
অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মোটামুটি হাইট ঠিক থাকলেই আমরা চাকরিতে নিয়ে নিই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি হয়নি, এমন নজির খুবই কম। আমরা গতবার কনস্টেবল নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে ৪০টি আবেদন পেয়েছি, ৩৯ জনই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, একজন হাইটের কারণে হয়নি। ’
![](files/mukti_ma_519581592.jpg)
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, পুলিশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন প্রয়োজন। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আবার নিয়োগ হবে। আপনাদের পরিবারের কেউ থাকলে পাঠিয়ে দেবেন। চাকরি না হলে আমাকে ফোন দিবেন, অবশ্যই চাকরি হবে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আবদুল জলিল মণ্ডল, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ডের সভাপতি সাহাব উদ্দিন, মহানগর কমান্ডের সভাপতি মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল্লাহ বলেন, আমরা সবসময়ই সজাগ থাকি যাতে মুক্তিযোদ্ধারা উপযুক্ত সম্মান পায়। আমাদের প্রশাসনের সর্বস্তরে এ নির্দেশনা দেয়া আছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধেরে কারণেই আজকে দেশের প্রতিটি মানুষের খাবারের অধিকার নিশ্চিত করা গেছে। বাংলাদেশ আজ প্রকৃত অর্থেই স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে অনেক সময় চাকরি দেওয়া সম্ভব হয় না, কারণ অর্থের বিনিময়ে কিছু মুখোশধারী প্রতিপক্ষের লোকজনের জন্য সুপারিশ করে। মীর জাফররা তো সব যুগেই ছিল। আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা এ ধরণের কুলাঙ্গাররাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে প্রমাণ করেছিল এ দেশে বেঈমানের সংখ্যাই বেশী।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ভূমিকার জন্য জাসদের সমালোচনা করে মণ্ডল বলেন, একাত্তরে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরাই যুদ্ধ করেছে। উচ্চবিত্তের কেউ যুদ্ধে যায়নি কারণ তাদের মধ্যে স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিধা ছিল, নিজের কর্তৃত্ব নিয়ে সংশয় ছিল। এ শ্রেণীর প্রতিনিধি ও হাজার হাজার জামায়াত দিয়েই জাসদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।
এসময় চট্টগ্রামকে সত্যিকারের হেলদি সিটিতে পরিণত করতে নিজের উদ্যোগের কথা জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার আহ্বান জানান মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী একাত্তরে নিজের রক্ত দিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। আজও দেশের স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে।
“আমরা শহীদ পুলিশ সুপার শামসুল হকের উত্তরসূরী। যার কারণে যারা এই দেশকে গর্ভাবস্থায় হত্যা করতে চেয়েছিল, আমরা চাইনি তারা ক্ষমতায় আসুক। ”
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ছিল খুবই কঠিন পরীক্ষার সময়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নস্যাত করতে রাজাকারেদের গাড়িতে যারা পতাকা উড়িয়েছিল তারা চেয়েছিল সহিংসতা করতে। পুলিশ বাহিনী নিজের বুকের রক্ত দিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।
“আমাদের ১৯ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছে, আটশ’র অধিক সদস্য আহত হয়েছে, আমরা পিছিয়ে যায়নি। আমরা পদোন্নতি কিংবা বেতন ভাড়ানোর জন্য এ কাজ করিনি, দেশের জন্য করেছি। ”
মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্যের স্বার্থবিরোধী কাজ দেখলেই আপনারা ফোন করবেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো। কয়েকজন কুলাঙ্গারের জন্য পুলিশ বাহিনী দুর্নামের বোঝা বয়ে বেড়াবে না।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্বারক ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণের আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ১২০ জন মুক্তিযোদ্ধার হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৪