ঢাকা, শনিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘স্বামীরা ডাকাতি করে, স্ত্রীরা বোমা ‍বানায়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
‘স্বামীরা ডাকাতি করে, স্ত্রীরা বোমা ‍বানায়’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নগরীতে স্বর্ণের দোকান ডাকাতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে চার নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজন দুই ডাকাতের স্ত্রী।

তিন নারী বোমা বানানো এবং বহনে বিশেষভাবে পারদর্শী বলে জানিয়েছেন কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম।

তিন নারী হল, ডাকাত মনিরের স্ত্রী জুলেখা বেগম (৩১) ও খোরশেদা আক্তার (২১) এবং ডাকাত কালাম প্রকাশ আবুল কালামের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩৪)।
তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া অপর নারী হল রুমা বেগম (২৮)।

নগর পুলিশের কোতয়ালি জোনের সহকারি কমিশনার শাহ মো.আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, জুলেখা ও খোরশেদাকে বুধবার ভোরে নগরীর পুরাতন স্টেশন রোডের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। আর হাসিনাকে নগরীর একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে কৌশলে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রুমাকে নগরীর মাইলের মাথা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জুলেখা ও খোরশেদার স্বামী মনির এবং হাসিনার স্বামী কালাম ১৩ ডিসেম্বর রাতে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির সময় বিস্ফোরিত বোমায় গুরুতর আহত হয়। তারা পুলিশ হেফাজতে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, মনির ও কালাম তাদের স্ত্রীদের বোমা বানানো ও বহনের কাজে ব্যবহার করে। স্বামীরা ডাকাতি করে আর স্ত্রীরা বোমা বানিয়ে তা সরবরাহ করে। নিউমার্কেট এলাকায় স্বর্ণের দোকান ডাকাতিতে ব্যবহৃত বোমাও মনিরের স্ত্রী বানিয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

স্বর্ণের দোকান ডাকাতিতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে ‍পুলিশ। এরা হল, ইমতিয়াজ উদ্দিন বাবুল, হাসান জমাদার, মো.মানিক ওরফে কানা মানিক, আবুল কালাম প্রকাশ কালাম ও মো.মনির।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কমপক্ষে সাতজনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান ওসি।

প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এসব ডাকাত এবং চার নারীর সঙ্গে আরও দু’জন পুরুষকেও গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। দু’পুুরুষ হল, হালিম হাওলাদার প্রকাশ নয়ন এবং রুমা বেগমের ভাই মো.রিয়াজ।

তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোতয়ালি থানার পরিদর্শক নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, চার নারীসহ ছয়জনের ডাকাতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা নেই। তবে কালামের স্ত্রী হাসিনা ডাকাতির পর সেখানে ব্যবহৃত অস্ত্র নিজের হেফাজতে রেখেছিল। পরে পুলিশ অভিযান শুরুর পর সেই অস্ত্র দিয়ে আসে রুমা ও তার ভাই রিয়াজের কাছে। হালিম, জুলেখা ও খোরশেদার মাধ্যমেও অস্ত্র হাতবদল হয়েছে।

কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি অস্ত্রগুলো বরিশালে নিয়ে যাবার কথা ছিল। ফিরিঙ্গিবাজার লইট্যাঘাটে অস্ত্রগুলো নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে নৌকায় উঠার সময় আমরা হাসান ও মানিককে নিয়ে সেখানে অভিযান চালায়। এসময় আমাদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয়। গ্রেপ্তার হওয়া রুমা ও তার ভাইয়ের কাছেও আমরা অস্ত্র পেয়েছি।

সিসি ক্যামেরা না থাকায় টার্গেট
গত ১৩ ডিসেম্বর নগরীর জিপিও’র সামনে গিণি গোল্ড জুয়েলার্স ও অপরুপা জুয়েলার্সে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাতেরা এ বিষয়ে পুলিশের কাছে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে।

কোতয়ালি থানার এস আই মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, বাবুল, কালাম, মনির, হাসান, মানিক ও শাহজাহান স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। শাহজাহানকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ডাকাতির জন্য ১৫দিন আগে তারা চট্টগ্রাম শহরে আসে।

এরপর তারা নগরীর আক্তারুজ্জামান সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, বহদ্দার হাট, নিউমার্কেট, ভিআইপি টাওয়ারের স্বর্ণের দোকানগুলো ডাকাতির উদ্দেশ্যে রেকি করে। কিন্তু এসব মার্কেটে সিসি ক্যামেরা থাকায় এবং পালানোর পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় তারা ডাকাতির পরিকল্পনা বাদ দেয়।

এরপর তারা নোয়াখালি জেলার মাইজদী এবং কুমিল্লা জেলা সদরে কয়েকটি স্বর্ণের দোকান ডাকাতির উদ্দেশ্যে রেকি করে। কিন্তু এসব দোকানের সামনে টমটম ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকায় পালানোর ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটতে পারে ভেবে সেই পরিকল্পনাও বাদ দেয় তারা।

গত ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীতে এসে জিপিও’র সামনে পুরো এলাকা রেকি করে ডাকাতদল। প্রথমে কালাম ও মনির গিয়ে রেকি করে। এর পরদিন বাবুল ও কালাম গিয়ে স্বর্ণের দোকান ও আশপাশের এলাকা রেকি করে। বাবুল গিণি গোল্ড জুয়েলার্স থেকে একটি স্বর্ণের নাকফুল কিনে। এসময় বাবুল ও কালাম দোকান বন্ধ করার সময়সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেয়।

এস আই মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সিসি ক্যামেরা না থাকা, সহজে পালিয়ে যাবার সুযোগ থাকা এবং প্রদর্শনীতে বিপুল পরিমাণ গিণি স্বর্ণ থাকায় তারা ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। ঘটনার পর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে, এটা তারা ভাবেনি।

ডাকাতি করে দিনে, বাহিনীতে ৭০ থেকে ৮০ জন
স্বর্ণের দোকান ডাকাতিতে জড়িত গ্রুপটি সাধারণ দিনের বেলায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ডাকাতি করে। তাদের মূল টার্গেট স্বর্ণের দোকান।

গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোতয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বাংলানিউজকে জানান, বাবুল ও হাসানের নেতৃত্বাধীন এই বাহিনীতে ৭০ থেকে ৮০ জন ডাকাত আছে। তাদের কেউ জেলে, কেউ বাইরে আছে। সাধারণত স্বর্ণের দোকান বন্ধের সময় এবং খোলার সময় তারা ডাকাতি করে।

এই ডাকাত বাহিনী সারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও নগরীতে ঘুরে ঘুরে রেকি এবং সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে তারপর ডাকাতির সিদ্ধান্ত নেয় বলে ওসি জানান।

ওসি জানান, আটক হওয়া হাসান জমাদার ডাকাতির টাকায় ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় বিশাল অট্টালিকা তৈরি করেছে। সম্প্রতি সে ঢাকায় আরও একটি একতলা বাড়ি কিনেছে। চট্টগ্রামে স্বর্ণের দোকান ডাকাতির সময় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিও তার নিজস্ব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৭,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।