চট্টগ্রাম: নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের কার্যক্রমকে সম্পূর্ণভাবে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। ফলে শিগগির ই-অফিসে রূপান্তরিত হবে আধুনিকায়নে পিছিয়ে থাকা এ দফতরটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর অটোমেশনের আওতায় আসলে দ্রুত সেবা প্রাপ্তি, অনিয়ম-দুনীতি হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হবে হয়রানি।
এমএমডি (মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট) সূত্রে জানা গেছে, কাজে গতি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে অটোমেশনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নৌ-বাণিজ্য অধিদফরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রিন্সিপাল অফিসার প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণের পরই এসব উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশাল সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ লোকবল ও সুযোগ সুবিধা দরকার তা না থাকায় অনেক সময় অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই এ কার্যালয়কে গতিশীল ও আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সমুদ্রে অবস্থিত সকল জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের কাজ। কিন্তু নানা সিমাবদ্ধতার কারণে সঠিকভাবে সব সময় কাজ করা সম্ভব হয় না।
‘তাই এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। ফলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজের গতি এসেছে। ’
এরইমধ্যে নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু, ডাটাবেজ আধুনিকায়ন, রেজিস্ট্রেশন ও সার্ভের জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ, অনলাইনে এনওসি ও ওয়েভার প্রদান, ই-পেমেন্ট সার্ভিস চালুসহ বেশ কিছু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান প্রিন্সিপাল অফিসার।
জানা গেছে, নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর সামুদ্রিক নৌ-চলাচল সম্পর্কিত কাজে নিয়োজিত একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রে অবস্থিত সকল জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই প্রতিষ্ঠানের কাজ।
জনবল সংকট প্রধান সমস্যা:
২০১৩ সালে সমুদ্রগামী জাহাজের সংখ্যা ৭৬ থাকলেও ২০১৪ সালে চারটি কমে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৩। উপকূলীয় মালবাহী জাহাজের সংখ্যা অবরিবর্তীত থাকলেও বেড়েছে উপকূলীয় তেলবাহী জাহাজের সংখ্যা। বেড়েছে ফিশিং ট্রলার, ফিশিং বোট ও কার্গো বোটের সংখ্যা। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ফিশিং বোটের সংখ্যা।
নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রশন নেওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৬০৭। আর ২০১৪ সালের প্রথম ছয়মাসে ১ হাজার ২১টি বেড়ে ১২ হাজার ৬২৮ দাঁড়িয়েছে। এরমধ্যে কেবল ফিশিং বোট বেড়েছে ৯৮৭টি।
এই হিসেবে গড়ে প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই হাজার জাহাজ বাড়ছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের লোকবল বাড়ছে না। ফলে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কমছে সেবার মানও।
শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার জাহাজ বাড়লেও লোকবল অনেক কম। জনবল সংকটের কারণে বিশাল সমুদ্রে অবস্থিত সব জাহাজের সার্ভে করা সম্ভব হয় না।
১৯৮৩ সালের ইনাম কমিটির লোকবল দিয়ে এখনো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তখন এতো জাহাজ ছিল না। চট্টগ্রাম বন্দরেও এতো জাহাজ ভিড়তো না। কর্ম পরিধি দিন দিন বাড়লেও লোকবল সংকট কাটছে না।
তবে সম্প্রতি ছয়টি পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরো চারটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে কিছুটা হলেও কাজে গতি এসেছে।
অধিদফতরের কার্যক্রম ও পরিধি বৃদ্ধি পাওয়াতে তা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নতুন জনবল কাঠামো পুনঃবিন্যাস প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
কমেছে অনিয়ম:
লোকবল সংকটে নির্দিষ্ট কয়েকজন লোকের নিয়ন্ত্রণে ছিল নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর। তাদের ছাড়া অফিস অচল ছিল। ফলে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে তারা। তাই অনিয়ম ও হয়রানি বাড়ে এখানে।
বর্তমানে বিভিন্ন পদে বদলি প্রথা চালুর কারণে স্বেচ্ছাচারিতা যেমন কমেছে তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব ধরণের কাজে দক্ষ হয়ে উঠছেন দাবি করেছেন প্রিন্সিপাল অফিসার। এছাড়া প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও প্রত্যেকের জন্য কম্পিউটার নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে জাহাজের এনওসি জারি করতে কয়েকদিন সময় লাগতো। কিন্তু বর্তমানে তা আধঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। সার্ভের শেষ করার পর একদিনের মধ্যেই রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নৌ-বাণিজ্য অধিদফতরের অধিকাংশ কাজ বন্দরকে ঘিরে হওয়াতে বন্দর এলাকায় নিজস্ব ভবন নির্মাণের পর সেখানে অফিস স্থানান্তর করা হবে। পাশে বন্দর ও কাস্টমস হাউস থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত গ্রাহক সেবা প্রদানে সেখানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪