চট্টগ্রাম: সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবে তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে বড় ধরণের পরিবেশ বিপর্যয় বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন দিনব্যাপী ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা- চিটাগং ট্রাভেল মার্ট-২০১৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সুন্দরবনের দুর্ঘটনার পর থেকে সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও এই প্রথম কোন মন্ত্রীর কাছ থেকে বিপর্যয়ের স্বীকারোক্তি এসেছে।
রাশেদ খান মেনন বলেন,‘বিপর্যয় হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। শিকড় থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। ফলে তেল যদি ভেতরে ডুকে যায় তাহলে নতুন করে আর উদ্ভিদ জন্মাবে না। পানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেল অপসারণে সরকার ইতিমধ্যে স্থানীয় জনগনকে কাজে লাগিয়েছে। জাতিসংঘের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। তারা এসে তেল অপসারণ করে ফেলবে। তবে এটা আমাদের জন্য বড় ধরণের দুর্ঘটনা। ’
ভারত-বাংলাদেশ নৌ প্রটোকল রুট ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের নৌবাণিজ্য যোগাযোগের বন্ধ হয়ে যাওয়া পথ ঘাষিয়াখালী চ্যানেল উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন,‘অব্যবস্থাপনার কারণে বিএনপি আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঘাষিয়াখালী নৌ রুট চালু হলে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচলের প্রয়োজন পড়বে না। ’
চট্টগ্রামকে বাণিজ্য রাজধানীর পাশাপাশি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে বলে জানান পর্যটনমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারকে চার লেনে সংযুক্ত করা এবং ট্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করা। এছাড়া টেকনাফের সাবরাংয়ে চার হাজার একশ একর জমিতে এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন গড়ে তোলা হবে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করতে ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। এখন মূল্যায়নের কাজ চলছে। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া যাবে। ’
পর্যটনমন্ত্রী বলেন,‘কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে পর্যটনের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের পাশে আরেকটি সৈকতের উন্নয়ন কাজ করা হবে। বাটালি হিলকে কেটে ফেলা হয়েছে বলে শুনেছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ বাটালী হিলের সৌন্দর্য যেন রক্ষা করা হয়। ’
এছাড়া চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলো আরও উন্নত করা হবে বলে জানান মন্ত্রী।
রাশেদ খান মেনন বলেন,‘চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। অনেকগুলো কার্গো বিমান এখন আসছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করা হবে। চীনে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ’
মন্ত্রী বলেন,‘যেকোন দেশের পর্যটন সেদেশের মানুষের উপর নির্ভর করে। মানুষের মধ্যে যদি পর্যটন মানসকিতা না থাকে তাহলে পর্যটন শিল্প এগুবে না। স্থানীয়রা যদি সহায়তা না করে তাহলে উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। ’
তিনি বলেন,‘পর্যটন খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে পর্যটন খাত। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও পর্যটন খাত এগিয়ে থাকবে। একজন পর্যটক আসলে ১১জন লোকের কর্মসংস্থান হয়। ’
মন্ত্রী বলেন,‘পর্যটনের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন সেটি আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হয় না। বেসরকারি খাতে যারা কাজ করছেন তারা নানামুখী অসুবিধার সম্মুখিন হচ্ছেন। আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাব করেছি ২০১৬ সালকে যাতে পর্যটন বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসবে। ’
অনুষ্ঠানে সভাপতি বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন,‘১৭’শ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা বেড়িবাঁধে চারলেন সড়ক তৈরি করা হবে। সাগর পাড়কে কেন্দ্র করে একটি আধুনিক শহর গড়ে তোলা হবে। ’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম ও দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। পরে ফিতা কেটে মন্ত্রী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার উদ্বোধন করেন।
মেলায় দেশ বিদেশের জাতীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থা, ভ্রমণ আয়োজক, হোটেল, রিসোর্ট, বিনোদন পার্ক ও পর্যটনব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মেলা চলাকালে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ, এয়ারটিকিট, হোটেল ও রিসোর্টগুলোতে দর্শকদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।
২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪