ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বোমা মেরে স্বর্ণের দোকান ডাকাতির হোতা বাবুলের জবানবন্দি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪
বোমা মেরে স্বর্ণের দোকান ডাকাতির হোতা বাবুলের জবানবন্দি ডাকাত ইমতিয়াজ বাবুল

চট্টগ্রাম: নগরীর কোতয়ালি থানার জিপিও’র সামনে বোমা মেরে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুর্ধর্ষ ডাকাত ইমতিয়াজ বাবুল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে বাবুল পরিকল্পনা থেকে ডাকাতি পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।



বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নূরে আলম ভূঁইয়ার আদালতে বাবুল দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা বাবুলেরেআট পৃষ্টার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেছেন আদালত।


কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নেজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইমতিয়াজ বাবুল আদালতে জবানবন্দি দিয়ে ডাকাতির ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিল সে বিষয়েও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে বাবুল।

গত ১৩ ডিসেম্বর নগরীর জিপিও’র সামনে গিণি গোল্ড জুয়েলার্স ও অপরুপা জুয়েলার্সে বোমা মেরে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও কমপক্ষে ১২ জন আহত হয়। ডাকাতি শেষে পালিয়ে যাবার পথে নগরীর পাহাড়তলী থানায় পুলিশের চেকপোস্টে বাবুল আটক হয়।

কোতয়ালি থানার এস আই মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ইমতিয়াজ বাবুলকে আমরা সাতদিনের রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি জবানবন্দি দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে বাবুল জানিয়েছে, বাবুল, কালাম, মনির, হাসান, মানিক ও শাহজাহান স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। মুঠোফোনে যোগযোগ করে বাবুল ও হাসান এবং অন্যান্যরা ডাকাতির পরিকল্পনা করে। ডাকাতির জন্য বোমা ও অস্ত্র আনার ভার ন্যস্ত হয় হাসানের উপর।

ডাকাতির জন্য ১৫দিন আগে হাসানের গ্রুপ চট্টগ্রাম শহরে আসে। এরপর তারা নগরীর আক্তারুজ্জামান সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, বহদ্দার হাট, নিউমার্কেট, ভিআইপি টাওয়ারের স্বর্ণের দোকানগুলো ডাকাতির উদ্দেশ্যে রেকি করে। কিন্তু এসব মার্কেটে সিসি ক্যামেরা থাকায় এবং পালানোর পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় তারা ডাকাতির পরিকল্পনা বাদ দেয়।

এরপর তারা নোয়াখালি জেলার মাইজদী এবং কুমিল্লা জেলা সদরে কয়েকটি স্বর্ণের দোকান ডাকাতির উদ্দেশ্যে রেকি করে। কিন্তু এসব দোকানের সামনে টমটম ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকায় পালানোর ক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটতে পারে ভেবে সেই পরিকল্পনাও বাদ দেয় তারা।

গত ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীতে এসে জিপিও’র সামনে পুরো এলাকা রেকি করে ডাকাতদল। প্রথমে কালাম ও মনির গিয়ে রেকি করে। এর পরদিন বাবুল ও কালাম গিয়ে স্বর্ণের দোকান ও আশপাশের এলাকা রেকি করে। বাবুল গিণি গোল্ড জুয়েলার্স থেকে একটি স্বর্ণের নাকফুল কিনে। এসময় বাবুল ও কালাম দোকান বন্ধ করার সময়সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় জেনে নেয়।

ডাকাতির জন্য ১২ জন হাসানের মাইক্রোবাসযোগে এসে ঘটনার রাতে পৌনে ৮টায় জিপিও’র কিছুটা দূরে সড়কের বিপরিত পাশে অবস্থান নেয়। ১১ জন গাড়ি থেকে নেমে দোকান দু’টির সামনে যায়। তিনজন গিয়ে গিণি গোল্ড জুয়েলার্সের মালিকের মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে স্বর্ণালংকার তাদের দেবার নির্দেশ দেয়। আরও তিনজন অপরুপা জুয়েলার্সে গিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করে।

স্বর্ণ লুট করা নিয়ে বাড়াবাড়ির এক পর্যায়ে গিণি গোল্ড জুয়েলার্সের মেঝেতে একটি বোমা ছুঁড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। কিন্তু সেটা বিস্ফোরিত হয়নি। এরপর আরও একটি বোমা ছুঁড়ে মারা হয়। সেটি বিস্ফোরিত হয়ে এর স্প্লিন্টার গিয়ে পড়ে বোমাভর্তি ব্যাগে। একইসঙ্গে কয়েকটি বোমা একত্রে বিস্ফোরিত হয়ে বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়।

এরপর তারা গিণি গোল্ড থেকে দ্রুত স্বর্ণালংকার নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। ছয়জন দ্রুত মাইক্রোবাসে উঠে পালিয়ে যায়।   বাবুল ও আরেকজন মাইক্রোবাসে উঠতে না পেরে অটোরিক্সা করে পালিয়ে যায়। তবে পাহাড়তলীতে পুলিশের চেকপোস্টে বাবুল ধরা পড়ে।

ডাকাতির ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বাবুল ও হাসানসহ পাঁচজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

এদিকে দুর্ধর্ষ ডাকাত ইমতিয়াজ বাবুলসহ স্বর্ণের দোকান ডাকাতিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হওয়ায় নগরীর কোতয়ালি ও পাহাড়তলি থানা এবং খিলগাঁও থানাকে যৌথভাবে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।