চট্টগ্রাম:সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, এখনকার বাচ্চারা ফার্মের মুরগীর মত। এখন অভিভাবকরা ভোরবেলা টানতে টানতে শিশুদের স্কুলে নিয়ে যান।
তির্যক নাট্যদলের ৪০বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
নূর বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের যেভাবে বড় করা উচিত সেভাবে কি আমরা তাদের বড় করছি? শিক্ষার সাথে যদি সংস্কৃতি যুক্ত না হয় তাহলে সেটা কি শিক্ষা হয়?
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বাচ্চারা স্কুল থেকে আসার পরে একটু ঘুমায়,তারপর হোমওয়ার্ক করে। হাতের কাছে থাকে টেলিভিশন,সেখানে ডোরেমন দেখে। এখন হিন্দি বন্ধ করে বাংলায় চালু আছে ডোরেমন। নইলে আমার ভয় ছিল বাচ্চারা যেভাবে হিন্দিতে ডোরেমন দেখে একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বলবে,মা,মুঝে নাস্তা কারনা হ্যায়।
তিনি বলেন, আমরা বলি শিশুরা ফুলের মত। কিন্তু এখানে গান,কবিতা,আকাশ,ফুল,পাখি,নদী নেই। শুধু বইয়ের পৃষ্টা আর স্কুলে যাওয়া আছে।
তিনি বলেন, সপ্তাহের একটা দিনে বাচ্চাদের বলা হয় আজকে তোমাকে গান শিখতে হবে,নাচ শিখতে হবে। ওদিকে মায়েরা সন্ধ্যায় টিভি ছেড়ে জি বাংলা দেখে।
তিনি বলেন, জিপিএ ফাইভ নির্যাতনে শিশুরা ভুগছে। মা বাবা শিক্ষক সবাই এর পেছনে ছুটছে। এটা না পেলে জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু যাদের বই পড়ছে,তারা কেউ জিপিএ ফাইভ পায়নি। শিশুরা তথ্য মাথায় ঢুকাচ্ছে কিন্তু কোন জ্ঞান অর্জন করছেনা। একারণে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে সেখানে টিকছেনা।
তিনি বলেন, মানুষ হতে শিক্ষার সাথে সংস্কৃতির যুক্ত হওয়া দরকার। তবে আমাদের শিশুরা অনেক শানিত,ধারালো হয়ে গড়ে উঠতো।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন,ত্যাগের মধ্য দিয়ে নাট্য আন্দোলনের শুরু। আমরা যারা ঢাকায় কাজ করেছি সবাই আগে মফস্বলে কাজ করেছি। ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের মাধ্যমে অমি নাটক শুরু করি। আমি তখন নাটক করতাম না। নাটক যারা করতেন তাদের চেয়ার টেনে দিতাম,পানি দিতাম,কস্টিউম ঠিক করতাম।
তিনি বলেন,আমাকে অনেকে বলে মহড়া কক্ষ,মঞ্চ তৈরি করে দেন,কিন্তু আমি তাদের সাথে একমত হতে পারিনা। আমরা ঢাকা থিয়েটার,আরণ্যক,চট্টগ্রামের তীর্যক,অঙ্গন যখন নাটক শুরু করেছি তখন এত অবকাঠামোগত সুবিধা ছিলনা।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন,প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট ভেঙে একটি আধুনিক কালচারাল কমপ্লেক্স করা হবে। এটার রিপোর্ট এসে গেছে, আমরা এটার কাজ শুরু করবো।
ঐতিহ্যগত ভাবে নাম একই থাকবে একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য শিক্ষাবিদ ড.অনুপম সেনের সভাপতিত্বে এবং তীর্যক নাট্যদলের পরিচালক আহমেদ ইকবাল হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে সৃজামী সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নৃত্য পরিবেশন করে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স।
আলোচনা সভার পর সংস্কৃতিমন্ত্রী ও নাট্যজন আসাদুজ্জামান নূর তির্যকের ৪০ বছরের স্মারক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
সন্ধ্যায় টিআইসি মিলনায়তনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এবং আহমেদ ইকবাল হায়দার নির্দেশিত রক্তকরবী পরিবেশিত হয়।
এর আগে বুধবার বিকেলে নগরীর ফুলকি স্কুলে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কিশোর চারুকলা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়:২২৩৭ ঘন্টা,ডিসেম্বর২৪,২০১৪