অন্যদের মতো হন্তদন্ত সুমন কাজ ফেলে দৌঁড়ে আসেন আগুন লাগা ভবনটির সামনে। নিচ তলায় সৃষ্ট আগুনে তখন ওই ভবনে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন।
সুমন অন্যদের সহায়তায় প্রায় দেড়শ মানুষকে নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনেন। আগুনের প্রকোপ বড় হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ আনতে পারায় হয়তো সুমনের এমন সাহসিকতা ওভাবে ফোকাস পাচ্ছে না। তবে কৃতজ্ঞ ভবনের বাসিন্দারা কৃতিত্ব দিতে ভুলেননি সুমনকে।
দীর্ঘ এক ঘণ্টা ধরে চূড়ান্ত ছোঁটাছুটির কারণে চেহেরাজুড়ে ক্লান্তির চাপ স্পষ্ট। মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ওই বাড়ির সামনে তাকে যখন আবিষ্কার করা গেল-দেখা গেল তার পায়ে নেই স্যান্ডেল, গায়ের টি-শার্ট আর প্যান্টটাও ভিজে একাকার।
মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ১৫ দিনের শীতকালিন ছুটিতে বাসায় রয়েছি। মঙ্গলবার বাসার একটি কাজ করছিলাম-এসময় বিকট আওয়াজে কিছু একটি বিস্ফোরিত হতে শুনলাম। পরে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে দেখলাম অদূরের একটি ভবনে আগুন লেগেছে। আগুনের কারণে ধোঁয়ার কারণে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে। এসময় ভবনের বাসিন্দারা কান্নাকাটি করছিল খুব। আমি দ্রুত পাশের নির্মাণিধীন ভবনে উঠে ওই ভবনে থাকা কিছু নির্মাণসামগ্রী দিয়ে মইয়ের মতো করে আগুন লাগা ভবনের সাথে সংযুক্ত করি। পরে ভবনের ছাঁদে থাকা প্রায় দেড়শ মানুষকে আমি কয়েকজনের সহযোগিতায় নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে আসি। পরে তারা নিরাপদে নিচে নেমে যান। ’
‘পরে ঝুঁকি থাকা সত্বেও ভবনের প্রায় প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে গিয়ে কোনো মানুষ আছে কিনা তা খোঁজ নিতে থাকি। এর মধ্যে তিন তলায় একজন বৃদ্ধাকে পেলাম। পরে তাকেও ছাদে তুলে পাশের নির্মাণাধীন ভবনে নিরাপদে নিয়ে আসি। ’ বলেন চট্টগ্রামের বিএনএস নির্ভীকে নৌ কমান্ডো হিসেবে কর্মরত নুর উদ্দিন সুমন।
তিনি আরও বলেন, ‘নৌবাহিনীতে কর্মরত থাকার সূত্রে আগুন লাগলে কিভাবে মানুষজনকে নিরাপদে নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে তার অভিজ্ঞতা আছে। এই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগিয়েছি আমি। ’
নয় তলা বিশিষ্ট এ ভবনের ৫৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। সবমিলিয়ে কয়েক’শ মানুষের বাস এই ভবনে। তাই আগুন ছড়িয়ে পড়লে বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারায় তেমন ক্ষতি হয়নি।
ভবনের ছয় তলার বাসিন্দা ইসতিফা জাহান শিলা নামের এক তরুণী বলেন, ‘মানুষটাকে আমরা চিনতাম না। তবে তিনি যেভাবে আমাদের নিরাপদে আনতে সহযোগিতা করেছেন-তা আমাদের সারাজীবন মনে থাকবে। তিনিসহ আমাদের নিরাপদে নিচে নামিয়ে আনতে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা’
এখনও যে মানবিকতা শব্দটি বেঁচে আছে তাই যেনো দেখিয়ে দিলেন মোহাম্মদ নুর উদ্দিন সুমন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তিনি দেখিয়ে দিলেন।
আগুনে আতঙ্ক, সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বাসিন্দাদের
বাংলাদেশ সময়: ২২০০, ৩ জানুয়ারি ২০১৭
টিএইচ/টিসি