তবে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম দাবি করেছেন, সন্দ্বীপে নেতাদের মধ্যে কোন্দল একসময় চরম আকার ধারণ করলেও গত ২-৩ দিন ধরে তা কমে এসেছে। এখন বড় ধরনের সংঘাতের কোন আশংকা নেই।
সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা। আরেক গ্রুপের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মাষ্টার এবং পৌর মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু আছেন বলে পুলিশের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শকের (বিশেষ শাখা) কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক প্রতিবেদনই আসে। সুনির্দিষ্টভাবে একটি নিয়ে বলা সম্ভব নয়। প্রতিবেদনের বিষয়ে আমাদের যা করণীয় আমরা সেটাই করি।
২০১৫ সালের ১ আগস্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে মুনিরুল আলম মুনির নামে এক যুবলীগ নেতা খুন হন। ওই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি নিয়ে সরকারি দলের দুই গ্রপের সংঘাতে মো.কবির ও মো.জাহাঙ্গীর নামে দুজন খুন হয়।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে তিনজন নিহত হন। ওই নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার ছোট ভাই জিল্লুর রহমান।
এরপর ২৯ এপ্রিল সন্দ্বীপের মগধরা ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের হামলায় বশির আহম্মদ (৩২) নামে এক যুবলীগ কর্মী খুন।
পুলিশ সূত্রের দেয়া তথ্যমতে, এর বাইরে গত দুই বছরে সন্দ্বীপে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গ্রুপে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে অর্ধশতাধিক। চট্টগ্রামের আর কোন উপজেলায় দলীয় কোন্দলে এই ধরনের খুনোখুনির ঘটনার রেকর্ড পুলিশের কাছে নেই
রাজনৈতিক এই সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত বছরের ১ নভেম্বর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে পাঠান ‘রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত গোপনীয় প্রতিবেদনে’ সন্দ্বীপ থানার ওসি মুহাম্মদ শামছুল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সন্দ্বীপে দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহজাহান মাষ্টার। তার সঙ্গে আছেন পৌর মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা আছে।
সাংসদের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাংসদের সঙ্গে আছেন সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান বেলাল, যুগ্ম সম্পাদক আলাউদ্দিন বেদন, দপ্তর সম্পাদক আবু তাহেরসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের একাংশ। মাঠ পর্যায়ে সাংসদের গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়, শাহজাহান মাষ্টার ও জাফরউল্লাহ টিটু এবং তাদের অনুসারীরা সাংসদকে অপদস্থ ও ঘায়েল করার জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছেন। তারা সাংসদের কোন অনুষ্ঠানে যান না। এলাকায় হত্যাকান্ডসহ যে কোন ঘটনা ঘটলেই তারা সাংসদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। সাংসদকে বিতর্কিত করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে শত্রুতা বেড়েছে।
‘ইহাতে যে কোন সময় দুই পক্ষের মধ্যে মারাত্মক সংঘাত সৃষ্টিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। ’ প্রতিবেদনে বলেন ওসি।
প্রতিবেদনে শাহজাহান মাষ্টার এবং জাফরউল্লাহ টিটু ও তাদের অনুসারীদের সাংসদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে হস্তক্ষেপ করে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশের এই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাহান মাষ্টার বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ নিজেই দলের ভেতরে গ্রুপিং সৃষ্টি করে। পুলিশ এলাকায় এলাকায় হেঁটে হেঁটে ছেলেদের জিজ্ঞেস করে তুমি কোন গ্রুপ কর, তোমরা কোন গ্রুপ কর ? আমি ৫০ বছর আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমার সূর্য এখন অস্তমিত হওয়ার পথে। আমি গ্রুপিং করে লাভ কী ?
‘কয়েকদিন আগেও এমপিকে নিয়ে বর্ধিত সভা করেছি। সেখানে তিনি বলেছেন আমি নাকি তার পিতৃতুল্য। মন থেকে বলেছে কি না জানি না। যা-ই হোক, কেউ অন্যায় করলে, দলের বিরুদ্ধে কাজ করলে পিতৃতুল্য হিসেবে আমি যদি শাসন করি সেটাকে গ্রুপিং বলা ঠিক হবে না। ’ বলেন শাহজাহান মাষ্টার।
পৌর মেয়র জাফরউল্লাহ টিটু বাংলানিউজকে বলেন, এমপি সাহেব তার উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে আওয়ামী লীগকে বাদ দিতে চান। সেজন্য সমস্যা হয়। আমরা তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে এই পর্যায়ে এসেছি। যারা তৃণমূল থেকে উঠে আসেননি তারাই দলের ভেতরে সমস্যা করে। তাদের কারণেই গ্রুপিং সৃষ্টি হয়।
সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বাংলানিউজকে বলেন, উনি (শাহজাহান মাষ্টার) আমার পিতৃতুল্য। আমার বাবার (সন্দ্বীপের প্রয়াত সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান) সঙ্গে উনার দূরত্ব ছিল। কিন্তু আমি সেই দূরত্ব কমিয়ে এনেছি।
‘সন্দ্বীপে বিগত সময়ে যেসব খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে যারা জড়িত কিংবা যারা খুন হয়েছে তাদের কেউই রাজনৈতিক কোন পদে নেই। সন্ত্রাসীদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৬
আরডিজি/টিসি