মামলা নেওয়া ও আসামিদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ ছিল, এমন মতও এসেছে জেষ্ঠ্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কর্ণফুলী থানায় সংবাদ সম্মেলন ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (বন্দর) হারুন-উর-রশিদ হাযারী বলেন, ঘটনার পর আমাদের যে ভূমিকা সেক্ষেত্রে, মামলা নেওয়া কিংবা আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আংশিক ব্যর্থতা ছিল, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।
কর্ণফুলী থানার ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে হারুন-উর-রশিদ হাযারী বলেন, বিষয়টি সিএমপি কমিশনার স্যারকে জানাব।
হারুন উর রশিদ হাযারী যখন ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছিলেন, তখন এই কর্মকর্তার পাশেই বসেছিলেন ওসি ছৈয়দুল মোস্তফা। সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণে যখন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা, তখন ওসি কখনো মুচকি হাসছিলেন আবার কখনো মাথা নিচু করে রাখেন। সংবাদ সম্মেলনের পুরো সময় ওসির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠলেও তিনি নিরুত্তর থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিবেদক আবেদুজ্জামান আমিরী ওসির উদ্ধত আচরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমি নিজেই ওসিকে ধর্ষণের কথা বলেছিলাম। তখন ওসি আমাকে বলেছিলেন-সেখানে ডাকাতি হয়েছে, কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। আমি বললাম-ওসি সাহেব, আপনাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম। ওসি বলছেন-আপনার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলাম।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি-বন্দর) আরেফিন জুয়েল বলেন, কার গাফেলতি কম, কার বেশি সেটা বিষয় নয়। ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং আসামিদের গ্রেফতারেই আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে হারুন উর রশিদ হাযারী দাবি করেন, ঘটনার দুই-তিনদিন পর বাদি থানায় এলেও ধর্ষণের কথা বলেননি। দস্যুতার বিষয়টিও তিনি শুধু মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন।
এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া মো.সুজন ওরফে আবুকে ২৮ ডিসেম্বর টিআই প্যারেডের মাধ্যমে ভিকটিমের শনাক্ত করার কথা আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আসামিকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে না নিয়ে টিআই প্যারেডের উদ্যোগ নিয়ে আরেকদফা প্রশ্নের মুখোমুখি হন কর্মকর্তারা।
এসময় সিএমপির সহকারী কমিশনার (কর্ণফুলী জোন) জাহেদুল ইসলাম বলেন, তদন্তের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে। রিমান্ডও একটা পদ্ধতি, টিআই প্যারেডও একটা পদ্ধতি। আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নেওয়ার আগে চূড়ান্তভাবে শনাক্তের জন্যই টিআই প্যারেড করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন কাউকে ধরেই রিমান্ডে নেওয়া, এটা একটা সহজ পদ্ধতি।
এসময় একের পর এক প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকলে জাহিদুল বলেন, আইনগত বিষয় নিয়ে আপনাদের সব প্রশ্নের জবাব দেওয়া এই মুহুর্তে সম্ভব না। প্রতিটি ঘটনার পেছনে অনেক ঘটনা থাকে। তবে এতটুকু বলতে পারি, আসামিদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। খুব শীঘ্রই আপনাদের সুখবর দিতে পারব।
গত ১২ ডিসেম্বর গভীর রাতে কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নের শাহ মিরপুর গ্রামে একটি বাড়িতে ডাকাতি করতে গিয়ে বাড়ির চার নারীকে ধর্ষণ করে ডাকাতরা। চারজনের মধ্যে তিনজন প্রবাসী তিন ভাইয়ের স্ত্রী, অন্যজন তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা ননদ।
এই পরিবারের চার ভাইয়ের মধ্যে তিনজন মধ্যপ্রাচ্যপ্রবাসী। তিন ভাইয়ের স্ত্রী তাদের শাশুড়ি ও দুই সন্তান নিয়ে এই বাড়িতে থাকেন। ধর্ষিতা গৃহবধূদের একজন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় মামলা নিতে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসি করার অভিযোগের পর ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান জাবেদের নির্দেশে কর্ণফুলী থানা পুলিশ প্রায় সাতদিন পর মামলা নেয়।
ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা হলেন, মো. সুজন ওরফে আবু, মাহমুদ ফারুকী ও বাপ্পী।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
আরডিজি/টিসি