জেলা প্রশাসনের পক্ষে শিক্ষা শাখার উচ্চমান সহকারী সজল কান্তি মজুমদার বাদি হয়ে ফলাফল ফাঁসে জড়িত বলে ৬ জনের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় মামলা করেছেন।
অভিভাবকরা ফলাফলে গড়মিলের আশঙ্কা করছেন।
মিজানুর রহমান নামে এক অভিভাবক সে রকম উদ্বেগের কথাই জানালেন।
এর আগে ২০ ডিসেম্বর ৩টি স্কুলের (চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দেড় ঘণ্টা আগেই বাবলা কোচিং সেন্টারের পরিচালক বাবলা দে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ফলাফল পোস্ট করেন।
জানা যায়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের গণিত শিক্ষক আনিছ ফারুক ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করেন। উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর প্রশ্নের সমাধান শিটটি তিনি বাসায় নিয়ে যান। বাসা থেকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলের গৃহশিক্ষক মামুন উত্তরপত্র মূল্যায়নের সমাধান শিটটির ছবি তুলে নিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে সেটি বাবলা কোচিং সেন্টারের পরিচালক বাবলা দে’কে সরবরাহ করেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে বাবলা স্যার কোচিং সেন্টারের ফেসবুক পেইজে সেটি পোস্ট করে দেন।
এরপর ফলাফল প্রকাশের (জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরবিহীন) প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে বাবলা দে’ কলেজিয়েট স্কুলের ২ জন শিক্ষক, উচ্চমান সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটরের যোগসাজশে ফেসবুকে ফলাফল পোস্ট করে দেন।
তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কলেজিয়েট স্কুলের গণিত শিক্ষক আনিছ ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোচিং সেন্টারের পরিচালক মামুন আমার ছেলের গৃহশিক্ষক। সেই সুবাদে বাসায় এসে সে স্কুল থেকে আনা সেই উত্তরপত্র মূল্যায়ন শিটটির ছবি তুলে নিয়ে গেছে। পরে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়াসহ বিভিন্নজনকে সে তা সরবরাহ করেছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই। ’
এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষাবাণিজ্যে জড়িত একটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। কোচিং সেন্টারের আড়ালে বাবলা দে, মামুন নামে ২ ব্যক্তি এ কাজের মূল হোতা। এই অপকর্মটিতে কয়েকজন শিক্ষক ও স্কুলের কর্মচারীর জড়িত থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। ফলাফল ফাঁসে জড়িত ৬ জনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় সদরঘাট থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, কলেজিয়েট স্কুলের গণিত শিক্ষক আনিছ ফারুকের কাছ থেকে গোপনে ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন শিট সংগ্রহ করেন মামুন কোচিং সেন্টারের পরিচালক মামুন। পরে ২০ ডিসেম্বর রাতে বাবলা কোচিং সেন্টারের পরিচালক বাবলা দে উত্তরপত্রের সমাধান শিট ফেসবুকে পোস্ট করে দেন।
এছাড়া একই দিনগত রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে কম্পিউটার অপারেটর রিদুয়ানুল হকের মাধ্যমে উচ্চমান সহকারী ফারুক আহমদ, সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন চূড়ান্ত ফলাফল শীটের কপি (জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরবিহীন) নেন। এর কিছুক্ষণ পর কলেজিয়েট স্কুলের গেটের বাইরে ফলাফল জানার অপেক্ষায় থাকা হামিদা বেগম নামে এক অভিভাবক মোবাইলে শেয়ার অ্যাপসের মাধ্যমে তা হাতে পান। তিনি ওই ফলাফল বাবলা দে’কে সরবরাহ করেন। বাবলা দে’র কোচিং সেন্টারের ফেসবুক পেইজে সেটি রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে পোস্ট করা হয়।
কোচিং সেন্টারের আড়ালে বাবলা দে ভর্তিবাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন জানিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে এমনও অভিযোগ রয়েছে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত টিকিয়ে দেবে বলে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান তিনি। পরীক্ষাকেন্দ্রে একসাথে একই রুমে বসানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকেন বাবলা। তবে ফলাফল ফাঁসে জড়িত কাউকেই কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদরঘাট থানার পরিদর্শক খন্দকার আওরঙ্গজেব বাংলানিউজকে জানান, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ফাঁসে জড়িত অভিযোগে জেলা প্রশাসনের শিক্ষা ও আইসিটি শাখার দায়ের করা মামলায় ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়:০০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এসবি/টিসি/জেএম