রোববার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মোখলেছুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে ৮৬৫ জন খালাসি নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢাকায় মন্ত্রীর বাসায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
২০১৫ সালে চতুর্থ শ্রেণির খালাসি পদে নিয়োগ বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পদে ৮৬৫ জনকে নিয়োগের কথা রয়েছে। মামলা জটিলতার কারণে প্রায় তিন বছর পরও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি। এরপরও মন্ত্রী নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যবস্থা না নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করতে সময়ক্ষেপণ করছে বলেও অভিযোগ করেন এ শ্রমিক নেতা।
মোখলেছুর রহমান বলেন, মন্ত্রীর আশপাশের লোকজনের গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট পুরো নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করছে। সব নিয়োগেই তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী চূড়ান্ত করতে হচ্ছে। এতে পোষ্যসহ কোন ধরনের কোটা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
টাকার নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার কারণে অদক্ষরা নিয়োগ পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে রেলে দক্ষ জনবল সৃষ্টি হচ্ছে না। এছাড়া টাকার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে কাজ না করে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের সবচেয়ে বড় পরিবহন খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলকে গতিশীল করতে আলাদা মন্ত্রণালয় করে বিপুল বরাদ্দ দিলেও সেই টাকা লুটপাটের মাধ্যমে খরচ হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট কাজ নিচ্ছে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না করে রেলের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর রেলে নিয়োগের দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, এর পরে কালো বিড়াল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও ইউসুফ আলী মৃধার পরিণতি সবার জানা। একই প্রেক্ষাপটে আজও রেলের নিয়োগে নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটসহ দুর্নীতির মহোৎসব চলছে।
রেলে লোকবল নিয়োগে সরকারি নিক নির্দেশনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরই অংশ হিসেবে প্রত্যেক নিয়োগেই গঠিত কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট মহাব্যবস্থাপকের অনুমোদন নিয়ে তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু বরাবরই এ প্রক্রিয়া নিয়মের জন্য বহাল রেখে রেলমন্ত্রণালয়ের নগ্ন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
‘এতে একটি মহলের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে। যোগ্য প্রার্থীকে সুযোগ দিচ্ছে না। রেলের পোষ্যরা চাকরি পায়না। মামলা মোকদ্দমা লেগেই থাকে। ’
রেলে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস এখন আইনে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারীরা জামায়াত-বিএনপির রাজনীতি সঙ্গে জড়িত অভিযোগ করে রেলমন্ত্রী মো.মুজিবুল হক দাবি করেছেন, নীতিমালার আলোকে গঠিত কমিটিই রেলের সব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। তাদের অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। কমিটি হয়তো তাদের অন্যায় আবদার রাখেনি তাই এ ধরনের অভিযোগ তুলেছে।
অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,‘এরা কারা সেই তথ্য সংগ্রহ করছি। মিথ্যা তথ্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। ’
সংবাদ সম্মেলনে রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক-কর্মচারী কমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রিয় আহ্বায়ক আবদুস ছবুর, রফিক চৌধুরী, কাজী আনোয়ারুল হক, মাহবুবুর রহমান মিন্টু, মো. ফারুক আলম, এসকে বারী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৭
এমইউ/টিসি