তারা রাজমা মানব (৫০) আর সুশীলা মহার্জন (৪২)। এসেছেন হিমালয় কন্যাখ্যাত নেপাল থেকে।
গত বছরের নভেম্বরের ১৩ তারিখ পর্যটক ভিসায় তারা বাংলাদেশে আসেন।
বুধবার ভোর সাড়ে ছয়টা থেকে আড়াইটা-এই আট ঘণ্টা চারটি হাত ব্যস্ত ছিল চট্টগ্রাম কলেজের এখানে ওখানে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা করতে।
আর সঙ্গী দুই হাত বাই পাঁচ হাতের একটা ব্যানার। যার এক পাশে বাংলাদেশের পতাকা আর অন্য পাশে বিশ্ব মানচিত্র আঁকা। উপরে বড় ইংরেজি হরফে লেখা-‘বিশ্ব পরিষ্কারকরণ প্রচারণা। ’
পরিচ্ছন্নতা অভিযান শেষে তারা মুখোমুখি হন শিক্ষার্থীদের। শীতের তীব্রতা ছাপিয়ে তাদের শরীর তখন ঘামে জবুথবু। শিক্ষার্থীদের বলেন ‘আমি নিজেই যদি নিজের শহর পরিচ্ছন্ন না করি তাহলে কে করবে?, চলুন শপথ করি আমরা শহরকে আবর্জনায় রাখবো না। ’
অর্থনীতিতে স্নাতক মানব আর অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সুশীলা এই কাজটি করে আসছেন আট বছর ধরে। তাদের সঙ্গে আরও ৮০জন মানুষ নিয়মিত নেপালের বিভিন্ন শহরের রাস্তাঘাট ঝাড়ু দিয়ে আসছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্যে সফল হয়েছে। আমাদের দেখা দেখিতে নেপালের মানুষরাও এখন নিজেরাই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছেন নিয়মিত।
দেশের চৌহদ্দিতে বন্দি সেই পরিচ্ছন্নতা অভিযানকে এই প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতেও নিয়ে এসেছেন এই দুজন। শুরুতেই তারা এসেছেন বাংলাদেশে। তাদের মাথায় আছে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াবেন-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের খাতিরে।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসার পর তারা থাকছেন কাতালগঞ্জ নবপণ্ডিত বিহারে। সেখান থেকেই দুজন প্রতি ভোরে বেরিয়ে পড়ছেন পরিচ্ছন্নতা অভিযানে।
চট্টগ্রাম কলেজে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তারা খুশি।
তারা বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের কথা আগ্রহভরে শুনেছেন। আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন। আর শপথ করেছেন তারাও আজ থেকে নিয়মিত নিজের শহর পরিস্কার করবেন।
শিক্ষার্থীরাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন তাদের কথা শুনে।
চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকালে কলেজে এসে দুজন অন্য দেশের মানুষকে এভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা করতে দেখে আমরা অবাক হয়েছি। তারা পরে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তাগাদা দিয়েছেন। তাদের কথায় ও কাজে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি।
১৬ জানুয়ারি রাজমা মানব ও আর সুশীলা মহার্জন চট্টগ্রাম থেকে পুনরায় ফিরবেন ঢাকায়। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা, তারপর ভুটান, সবশেষে মালদ্বীপ। এরপরেই ঘরে ফেরা।
চট্টগ্রাম কলেজে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার ফাঁকে রাজমা মানব ও আর সুশীলা মহার্জন বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে আমরা প্রচুর ডাস্টবিন দেখেছি। কিন্তু মানুষ তা ব্যবহার করছে না। ডাস্টবিনের বদলে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখছে তারা। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে শহরগুলো ঝকঝকে হবে। আমরা মূলত সবার কাছে সেই বার্তাটাই পৌঁছিয়ে দিতে চাই। কারণ পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য, বাসযোগ্য শহর গড়ে তোলার জন্য পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই।
আমরা স্বপ্ন দেখতে চাচ্ছি-আগামিতে আবারও যদি এই দেশে আসা হলে আমরা আর পথেঘাটে ময়লা পড়ে থাকতে দেখবো না। সেই ময়লা-আবর্জনা খুঁজে পাবো কেবল ডাস্টবিনেই।
এই দুই ভিনদেশির স্বপ্ন পূরণ হোক ! কারণ এতে যে লাভ আদতে বাংলাদেশেরই!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
টিএইচ/টিসি