ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ‘গডফাদার’ রেদোয়ানের নাম ফের আসে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানা পুলিশের হাতে ৭ হাজার ৭৫০ পিস ইয়াবাসহ মো. আবদুল গফুর নামে এক ইয়াবা ব্যবসায়ী গ্রেফতার হওয়ার পর। অথচ রেদোয়ানকে বাদ দিয়েই ওই মামলার চার্জশিট দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
গত বছরের ৬ অক্টোবর বায়েজিদ বোস্তামি থানার কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডে অনন্যা আবাসিকের চৌরাস্তার মোড় থেকে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আবদুল গফুর।
গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে রেদোয়ানসহ আরও তিনজনের নাম প্রকাশ করেন মো. আবদুল গফুর।
চার্জশিটে শুধু মো. আবদুল গফুরকে একমাত্র অভিযুক্ত করা হয়েছে। আবদুল গফুর (৫৮) কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার পালংখালী বালুখালীছড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে।
রেদোয়ান প্রকাশ মো. রেজওয়ান প্রকাশ প্রকাশ জুবায়ের (৫৫) চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার মোজাফফর নগর এলাকার মো. ছিদ্দিকের ছেলে।
আবদুল গফুর প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে প্রকাশ করেছিলেন মো. মীর কাশেম (৪১) ও মো. শরীফ (৪০) এর নাম। মীর কাশেম কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার দক্ষিণ খুনিয়াপালং এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে এবং শরীফ কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং জিনাপাড়ার লাল মিয়ার ছেলে।
তিনজনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) উৎফল চক্রবর্তী চার্জশিটে আসামির মোবাইল ফোনের সিডিআর বিশ্লেষণে রেদোয়ানসহ অন্যদের সঙ্গে আসামি গফুরের কথোপকথন হয়নি এমনটা উল্লেখ করেন এবং তাদের অপরাধের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদনও জানান।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উৎফল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, ‘তদন্তে গফুর ছাড়া অন্য আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই তাদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ’
প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে প্রধান আসামি গফুর ওই ইয়াবার সঙ্গে রেদোয়ান, মীর কাশেম ও শরীফ জড়িত বলে দাবি করলেও পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে সেরকম কিছু বলেননি বলে দাবি করেন এসআই উৎফল চক্রবর্তী।
রেদোয়ানকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেও তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে দাবি তদন্ত কর্মকর্তার।
রেদোয়ান, মীর কাশেম ও শরীফের মাধ্যমে ইয়াবা আনার তথ্য ভুল হলে তবে কার কাছ থেকে বা কাদের মাধ্যমে ওইসব ইয়াবা আনা হয়েছিল তদন্তে তা পাওয়া গেছে কী না জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
বায়েজিদ বোস্তামি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা যাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাননি তাদের বাদ দিয়েছেন হয়তো। পুলিশের কাছে গ্রেফতার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মিথ্যা তথ্য দেন। হয়তো আবদুল গফুরও গ্রেফতার হওয়ার পর মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। ’
গত বছরের ৭ নভেম্বর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মালয়েশিয়া পালিয়ে যাওয়ার সময় রেদোয়ান প্রকাশ মো. রেজওয়ান প্রকাশ প্রকাশ জুবায়েরকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। পরে বায়েজিদ বোস্তামি থানার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
গত ২৬ অক্টোবর মীর কাশেমকে এবং ৩ নভেম্বর শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মীর কাশেম জামিনে আছেন বলে জানা গেছে। তাদের গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো ফরোয়ার্ডিংয়ে তারা জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই উৎফল চক্রবর্তী।
জানতে চাইলে মামলার বাদি বায়েজিদ বোস্তামি থানার তৎকালীন এসআই ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘কুয়াইশ-অক্সিজেন রোডে অনন্যা আবাসিকের চৌরাস্তার মোড় থেকে ৭ হাজার ৭৫০ পিস ইয়াবাসহ মো. আবদুল গফুরকে গ্রেফতার করেছিলাম। গ্রেফতারের পর গফুর রেদোয়ান, মীর কাশেম ও শরীফসহ মিলে টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন বলে জানিয়েছিলেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৯
এসকে/টিসি