ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বছরজুড়ে আলোচনায় চট্টগ্রাম ওয়াসা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
বছরজুড়ে আলোচনায় চট্টগ্রাম ওয়াসা চট্টগ্রাম ওয়াসা।

চট্টগ্রাম: বছরের শেষ দিকে কার্যালয়ে দুদকের হানা, পুরো বছরজুড়ে সড়কে ধুলোর রাজত্ব, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বাভাবিক ভুতুড়ে বিল কিংবা প্রশিক্ষণের নামে কর্মকর্তাদের উগান্ডা ভ্রমণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা।

ওয়াসার এমন কর্মকাণ্ডে এ সেবা সংস্থার প্রতি নগরবাসীর বেড়েছে আস্থাহীনতা। বছরের পর বছর ধরে লেগে থাকা দুর্ভোগ লাঘবে দৃশ্যত কোন অগ্রগতি না থাকলেও বরাবরের মতই আশ্বাসের বুলি আওড়াচ্ছেন সংস্থাটির কর্তারা।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে বেতনের চেয়ে ওভারটাইম বেশি পান এমন অভিযোগ উঠে সংস্থাটির কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। এমনকি কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এ হরিলুট চলে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আটঘাট বেঁধে তদন্তে নামে দুদক। গত ২৬ নভেম্বর তিন সদস্যের টিম নিয়ে ওয়াসা কার্যালয়ে হাজির হয় দুদক টিম।

দুদকের তদন্তের বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের ওভারটাইম অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া আরও অনেক কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। বন্ধের দিনগুলোতে কর্মচারীদের ওভারটাইম দিতে হয়। তবে অতিরিক্ত ওভারটাইম আমার প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয় না। ’

এছাড়া চলতি বছরের জুনে সিস্টেম লসের নামে পানি চুরি, উৎপাদন নিয়ে হিসাবে গড়মিল, বিল আদায়ে অনিয়ম, বকেয়া অনাদায় ও মিটারবিহীন পানির সংযোগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠে সংস্থাটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাজস্ব বিভাগে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে ওয়াসা লাভের মুখ দেখছে না। এমন অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড।

তাছাড়া বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় প্রশিক্ষণের জন্য ওয়াসা এবং মন্ত্রণালয়ের ৪১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর উগান্ডা ভ্রমণ। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ‘চিটাগং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় ‘ওয়াসার সক্ষমতা বাড়াতে’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উগান্ডার ‘ন্যাশনাল ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ করপোরেশন’ কাজ করছে। এজন্য ফি হিসেবে প্রায় ১১০ কোটি টাকা নিচ্ছে তারা।

অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ গ্রাহকদের একজন ওয়াসা বোর্ডের সদস্য হওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সদস্য করা হয় সোলায়মান আলম শেঠকে। ২০১২ সালে নিয়োগ পাওয়া জাতীয় পার্টির এ নেতার বোর্ড সদস্য হিসেবে ২০১৫ সালে মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নতুন প্রতিনিধি নিয়োগ না দেওয়ায় চার বছর ধরে একই পদে রয়ে যান তিনি।

শুধু তা-ই নয়, বোর্ড সদস্যসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তির পরও পুনরায় একই ব্যক্তিকে সদস্য করতে আগ্রহী খোদ সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে গত ২৮ মে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভায় সাংবাদিক প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব মহসীন কাজীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ ওঠে এ বোর্ড সদস্যের বিরুদ্ধে।

এদিকে যত্রতত্র কাটা নগরের বিভিন্ন সড়ক নিয়ে বছরজুড়ে নগরবাসীর ভোগান্তির কমতি ছিল না। প্রায় প্রতিদিনই এমন তিক্ত স্বাদ গ্রহণ করেছে নগরবাসী। কিছুতেই যেন মুক্তি মিলছে না এই নারকীয় যন্ত্রণা থেকে। তাছাড়া এসব প্রকল্প ঘিরে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সেইসঙ্গে নগরজুড়ে তৈরি হয়েছে ধুলোর রাজত্ত্ব। চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য আরও অন্তত ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক কাটবে  প্রতিষ্ঠানটি।

গত এক বছরে ওয়াসার কাজের অগ্রগতি এবং সফলতা জানতে চাইলে প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, বিভিন্ন বাধা থাকার পরও আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে যে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা দরকার, তার চেষ্টা চলছে। আশা করি ২০২১ সালের মধ্যে আমরা সফলভাবে তা সম্পন্ন করতে পারবো।  

তিনি আরও বলেন, ‘কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে চারিদিক থেকে অনেক বাধার সম্মুখিন হতে হয়। তাছাড়া সব জায়গায় ধুলোবালির কারণে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে। সব বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে কাজ যাতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই চেষ্টাই করছি আমরা’।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৯
এমএম/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।