সদ্য বিদায়ী বছরে ৩ মিলিয়ন কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের রেকর্ড অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ২০১৯ সালে ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) হিসেবে সর্বমোট ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৯৭টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।
>> ‘ত্রি মিলিয়নিয়ার’ পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম
>> বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের মধ্যে ‘চট্টগ্রাম’ ৬৪তম
অন্যদিকে বন্দর ২০১৯ অর্থবছরে মোট কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন। এর আগের বছর যা ছিলো ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন। এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, জোয়ার-ভাটা নির্ভর কর্ণফুলী চ্যানেল দিয়ে কনটেইনারবাহী জাহাজ বহির্নোঙর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে আনা হয়। আবার গম, ছোলা, লবণ, ভোজ্যতেল ইত্যাদি খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে আসা বড় জাহাজগুলো বহির্নোঙরে রেখে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস করে নদীবন্দর, সাইলো জেটি ও শিল্পকারখানার কাছাকাছি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়।
বাংলাদেশে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ছোট ছোট অনেক জাহাজ আনার চেয়ে বড় জাহাজে কনটেইনার ও কার্গো পরিবহন করতে পারলে খরচ সাশ্রয় হবে। আবার জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমাতে পারলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানো যাবে। একটি জাহাজ যদি একদিন বহির্নোঙরে অপেক্ষা করে তাহলে ১০-১৫ হাজার ডলার বেশি দিতে হয় আমাদের। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সরকারকে বিষয়গুলো জানানো হয়েছে অনেক আগেই। ইতিমধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগও আলোর মুখ দেখছে। আশাকরি বে টার্মিনাল নির্মিত হলে বেশি ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ জোয়ারের অপেক্ষা না করে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আসা যাওয়া করতে পারবে। একই সঙ্গে বন্দরের বিদ্যমান জেটিগুলো সচল রাখতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং জোরদার করতে হবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক (বন্দর ও কাস্টম) খায়রুল আলম সুজন বাংলানিউজকে বলেন, দেশের অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হচ্ছে, পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, আমদানি-রফতানি বাড়ছে। তাই বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। কিন্তু যদি প্রতিবেশী দেশগুলোকে বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনের সুযোগ দিতে চাই তবে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব কার্গো বা কনটেইনার রাখার জন্য নতুন নতুন ডিপো তৈরি করতে হবে।
বন্দরের বেশিরভাগ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি)। এখানে হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে আছে দেশের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) ক্যাপ্টেন তানভির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার ও বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নতুন নতুন গ্যান্ট্রি ক্রেন ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট যুক্ত করার ফলে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুততার মধ্যে আমরা একটি জাহাজের কনটেইনার লোড-আনলোড করতে পারছি। ২০১৯ সালে ৪৭ দশমিক ৮ ঘণ্টায় (২ দিনের কম) একটি জাহাজের কনটেইনার লোড আনলোড করে আমরা রেকর্ড সৃষ্টি করেছি।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল ছিলো প্রায় ২ দশমিক ৬ দিন। আগামীতে এটি আরও কমে আসবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটি জাহাজশূন্য করতে হয়েছে ২০১৯ সালে। তারপরও জাহাজের গড় অবস্থান সময় কমেছে। আমাদের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এটি হলে আমরা আরও চারটি জাহাজ ভিড়াতে পারবো। এ ছাড়া বে টার্মিনালের নির্মাণকাজও এ বছর শুরু করতে পারবো আশা করি।
তিনি বলেন, সরকারের কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমানেরা নীতি, ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন, দেশে বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন ও সরবরাহ সাপ্লাই চেন নিরবচ্ছিন্ন রাখার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২০
এআর/টিসি