চট্টগ্রাম: ‘মুজিববর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান’- প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস। শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপনের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আগ্রাবাদের সরকারি কার্যভবন-২ এর সামনে সকালে অভিবাসী দিবস-২০২০ ও অনলাইন ফ্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে অভিবাসী তথ্যমেলার উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) আ স ম জামশেদ খোন্দকার।
দিবসের কর্মসূচির মধ্যে প্রবাসীর মেধাবী সন্তানদের পিএসসি, জেএসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস প্রাপ্ত সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক বিতরণ করা হয়। পিএসসিতে ১৪ হাজার, জেএসিতে ২১ হাজার, এসএসসিতে ২৭ হাজার ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ৩৫ হাজার টাকা করে ৫৭৬ জনকে চেক দেওয়া হয়েছে।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে অভিবাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। উপস্থিত সবাইকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের টি শার্ট, মগ ও ক্যাপ দেওয়া হয়।
এ ছাড়াও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আগমন ও বহির্গমনকালে অভিবাসীদের আগমনী ও বিদায় সম্ভাষণ জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে উপজেলায়ও কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।
অতিরিক্ত প্রশাসক আ স ম জামশেদ খোন্দকার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমরান আলী বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
এ সময় শাহ আমানত বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক ফরহাদ হোসেন খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মাধবী বড়ুয়া, বিকেটিটিসি অধ্যক্ষ বেগম নওরিন সুলতানা, মহিলা টিটিসি অধ্যক্ষ বেগম আশরিফা তানজীম, বেসরকারি সংস্থা ইপসার প্রোগ্রাম ম্যানেজার আবদুস সবুর, বিভাগীয় কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমা এবং বায়রা’র প্রতিনিধি এমদাদ উল্লাহ ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন।
ইমিগ্রেশনে সহায়তাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইপসা, বিলস, ব্র্যাক মাইগ্রেশন, বিটা, ঘাসফুল, কারিতাস ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সম্মাননা জানানো হয়। কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষতার সঙ্গে দীর্ঘ ২৫ বছর কাজ করে সুনাম অর্জন করায় মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলমকে সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, করোনাকালীন দেশে-বিদেশে নানা সমস্যা রয়েছে। সরকার প্রবাসীদের পুনর্বাসনসহ বিদেশ গমনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রবাসীদের ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ শতাংশ হারে ঋণ দিচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রদানকারীদের ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। পিসিআরের মাধ্যমে প্রবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সারা দেশে ৩৮ জনকে সিআইপি নির্বাচিত করা হয়েছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের ১৪ জন প্রবাসী রয়েছে।
বক্তারা বলেন, কর্মদক্ষতার সনদ ছাড়া বিদেশে কর্মীদের বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারও আশানুরূপ রেমিট্যান্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদেশের শ্রমবাজারে চাহিদা থাকলেও প্রশিক্ষণ না থাকার কারণে অনেকের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটছে না। এ জন্য প্রত্যেককে দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশকে সম্মানজনক পর্যায়ে পৌঁছানো যাবে। যারা এখান থেকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদ অর্জনের মাধ্যমে বিদেশ যাচ্ছে তারাই চাহিদার দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বেতন পাচ্ছেন। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করতে হলে অভিবাসী কর্মীদের কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। সব কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুবক-যুবতীদের দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের টেকসই ও উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে।
সরকার বিদেশ গমনে আগ্রহীদের দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে উপ-পরিচালক বলেন, ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে ৬ উপজেলায় টিটিসি নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলায় টিটিসি নির্মাণ করা হবে। www.internationalemegrationday2020ctg.org.bd এ সাইডে লগইন করে অভিবাসন সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি সব তথ্য ও সেবা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২০
এআর/টিসি