ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো উপকৃত হবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো উপকৃত হবে বক্তব্য দেন ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এমনকি ভুটান, নেপালসহ উপকৃত হতে পারে উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই লাভবান হতে পারে।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সঙ্গে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বৃহত্তর অর্থনীতি হিসেবে উদিত হচ্ছে। এ অঞ্চল ২৫০ কোটি মানুষের বাজার, চট্টগ্রাম যেখানে প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাণিজ্য, সামুদ্রিক ও উৎপাদন খাত চট্টগ্রামে অগ্রগণ্য। প্রতিবেশীদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের ওপর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই সেবা, উৎপাদন ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুত্বকে টেকসই করতে হবে।  

তিনি দীর্ঘমেয়াদির পাশাপাশি দুই থেকে তিন বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং লজিস্টিকস, বন্দর, অবকাঠামো, যোগাযোগ ও ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি খাতে কাজ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।  

তিনি ব্যবসায়ী নির্বাহীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি খাতে মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান। এ ছাড়া কনস্ট্রাকশন ইক্যুইপমেন্ট, মেডিক্যাল ইক্যুইপমেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস ও এপিআই পার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ কার্যকর হবে। চট্টগ্রামে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনা, বে-টার্মিনালে অর্থায়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের আগ্রহ রয়েছে। তিনি সীমান্তে আইসিডি, ওয়্যারহাউস নির্মাণ, রেললাইন উন্নয়ন ও স্থলবন্দরের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।   

চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন চেম্বার পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, বিএসআরএম’র এমডি আমীর আলীহুসেইন, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা মোস্তফা ও ডা. মুনাল মাহবুব, বেইস টেক্সটাইল লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার শাহাদাত (শোভন), গ্রীন গ্রেইন গ্রুপের এমডি শাকিল আহমেদ তানভীর, ক্যাপিটাল পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের এমডি রাশিখ মাহমুদ ও মার্কস বাংলাদেশ লিমিটেডের তানিম শাহরিয়ার।  

মাহবুবুল আলম বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে স্বাধীনতাযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণ ও সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান।  

তিনি উভয় দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ১০ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রদূত ও ব্যবসায়ী নেতাদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া সাগর ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন, রেলপথে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্থলবন্দরগুলোর জটিলতা সহজীকরণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পণ্য খালাসের গতি ত্বরান্বিত করা, ইলেক্ট্রনিক ডাটা বিনিময়ের মাধ্যমে স্থলবন্দরগুলোকে আরও বেশি ডিজিটালাইজড করা, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে সহায়তাকরণ, ভারত-বাংলাদেশ বার্ষিক বিজনেস কনফারেন্স আয়োজন, বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসে যৌথভাবে ল্যাবরেটরি বা টেস্টিং সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাব করেন চেম্বার সভাপতি। তিনি ধর্মীয় পর্যটনের মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন।  

এসএম আবু তৈয়ব দু’দেশের জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় উভয় দেশের পণ্য নিয়ে ‘ট্রেড শো’ আয়োজনের প্রস্তাব দেন।  

অঞ্জন শেখর দাশ পেট্রাপোলে তিন-চার দিন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক অপেক্ষমাণ থাকতে হয় উল্লেখ করে উভয় পক্ষের শুল্ক কর্মকর্তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকায় আমদানি করা তুলা ও অন্যান্য গার্মেন্ট কাঁচামাল সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ওয়্যারহাউস নির্মাণের আহ্বান জানান।  

সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বা এডিআর চালু করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং চেম্বারের বিশেষ উদ্যোগ বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্সের সঙ্গে ভারতীয় প্রথম সারির ম্যানেজমেন্ট স্কুলের যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়ী নির্বাহী উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান।  

সভায় চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী, রাষ্ট্রদূতপত্নী সংগীতা দোরাইস্বামী, দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি দীপ্তি আলংঘট, চেম্বার পরিচালক মো. আবদুল মান্নান সোহেল ও মো. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী, অতিরিক্ত কাস্টম কমিশনার আবু নুর রশিদ আহমেদ, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার মো. সরোয়ার হোসেন, লুব-রেফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সালাউদ্দিন ইউসুফ, বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রামের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আহমেদ আলী, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো’র পরিচালক আলতাফ হোসেন ভূঁইয়া, বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সেলিম রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।