চট্টগ্রাম: বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে শতভাগ বিদ্যুতায়নে পুরোদমে কাজ চলছে। দুর্গম অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংযোগ লাইনের কাজ ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় শেষ হবে।
পার্বত্য জেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০১৭ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।
এছাড়া ৩৬৩ কিলোমিটার (কিমি) ৩৩ কেভি লাইন, ৫৫৪ কিমি ১১ কেভি লাইন, ৩১৮ কিমি ১১/০.৪ কেভি লাইন এবং ৬৬৬ কিমি দশমিক ৪ কেভি লাইন নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজও শেষের দিকে। চলমান রয়েছে ৫৮৪টি ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ।
প্রকল্প সূত্র জানায়, তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৯০। চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৬ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা যাবে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ৩১ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আরও ২৫ হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে। বর্তমানে তিন জেলায় বিদ্যুতায়ন ৫৫ শতাংশ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হয়েছে। নতুন প্রকল্পের আওতায় ১২টি উপকেন্দ্রের কাজও শেষ পর্যায়ে।
দুর্গম অঞ্চলে সৌর বিদ্যুৎ
পার্বত্য তিন জেলার দুর্গম পাহাড়ে থাকা ৪০ হাজার পরিবারের কাছে গ্রিড লাইনের বিদ্যুৎ নেওয়া সম্ভব না হওয়ায়, সেখানে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০২০ সালের ১৪ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ২১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুর্গম এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সেটির কাজও নতুন বছরেই প্রায় শেষ হবে।
এ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি জেলা সদর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, কাউখালী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বরকল, রাজস্থলী, জুরাইল, নানিয়ারচর উপজেলা, খাগড়াছড়ি সদর, মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, লামছড়ি, রামগড়, দীঘিনালা, গুইমায়া, মহালছড়ি, মানিকছড়ি, বান্দরবান জেলা সদর, রুমা, লামা, নাইক্ষ্যংছড়ি, থানছি, আলীকদমও রয়েছে।
৪০ হাজার বাড়িতে ১০০ ওয়াট ক্ষমতার সোলার হোম সিস্টেম সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ১৩ হাজার করে এবং বান্দরবানে ১৪ হাজার সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া ওই তিন জেলার ২ হাজার ৫০০ হোস্টেল, এতিমখানা এবং কমিউনিটি সেন্টারে ৩২০ ওয়াট সোলার সিস্টেম স্থাপন হবে। এর মধ্যে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ৮০০ করে এবং বান্দরবানে ৯০০ সোলার স্থাপন করার কথা রয়েছে।
মানুষের মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বিদ্যুৎ: বীর বাহাদুর
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বাংলানিউজকে বলেন, দুর্গম পাহাড়ি ভূখণ্ডে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় বিকল্প উপায়ে সোলার ফটোভোল্টাইক সিস্টেমে দুর্গম পাহাড়ে বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। ওই এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তিন জেলায় প্রথম পর্যায়ে ১১ হাজার পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে সৌর বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ৪০ হাজার পরিবারে এবং আড়াই হাজার কমিউনিটি সেন্টারে সৌর বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজ চলছে। সোলার বিদ্যুৎ সেসব জায়গায় দেওয়া হচ্ছে, যেখানে আগামী ৫ বছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংযোগ লাইন পৌঁছানো যাবে না। একেবারে দুর্গম এলাকায় সোলার সিস্টেমে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিব শতবর্ষকে সামনে রেখে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে যদি কাজ শেষ নাও করতে পারি, তাহলে ২০২২ সালের প্রথম দিকে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হবে। মূলত করোনা ভাইরাসের কারণে কাজে একটু ব্যাঘাত ঘটেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২০
জেইউ/টিসি