চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে কলা বিক্রি করেন ষাটোর্ধ্ব আক্কাস আলী। এই হাসপাতালে প্রতিদিন করোনার টিকা নিতে আসছেন আগ্রহীরা।
আক্কাস আলী এসব দেখলেও করোনার টিকা দিতে রাজি নন তিনি। তার মতে, করোনার সময় কাজ করে যখন কোনো সমস্যা হয়নি এখনও কোনো সমস্যা হবে না।
একই কথা বললেন বৃদ্ধ আক্কাসের পাশে ডাব বিক্রি করা সুরুজ মিয়াও। তিনি বলেন, করোনা ধনীদের রোগ। এই রোগ গরীবকে কিছুই করতে পারবে না। কোনো কিছু ছাড়া যখন এতদিন বেঁচে থাকতে পেরেছি, টিকা ছাড়াই ওপরওয়ালার দোয়ায় আরও কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারবো।
তবে সুযোগ পেলে তিনি নিতে চান করোনার টিকা।
শুধু আক্কাস কিংবা সুরুজ নন, নগরের খেটে খাওয়া বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে জানেন না করোনার টিকা কোথায় দেওয়া হয়। তাছাড়া টিকা নেওয়ার পদ্ধতি অনলাইনে হওয়ায় অনেকের কাছে তা ঝামেলার বলে মনে হয় বলে জানান তারা।
তবে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার টিকা সর্বজনীন করা হলেও গণমাধ্যম ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কোনো প্রচারণা নেই। তাই খেটে খাওয়া মানুষ ও নিম্ন আয়ের মানুষরা জানেন না, টিকা কোথায় গিয়ে দিতে হয় কিংবা কিভাবে আবেদন করতে হয়।
চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ডা. মাহফুজুর রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে মূলত পরীক্ষামূলক টিকা কার্যক্রম চলছে। তাই হয়তো সবার কাছে টিকা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশে যে ইপিআই ব্যবস্থা রয়েছে তা যদি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে তাহলে সকলে টিকা পাবে।
তিনি করোনার টিকার প্রদানের আগে অ্যান্টিবডি টেস্টের ওপর গুরুত্ব দেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও হোম হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, জনসাধারণকে করোনার টিকা গ্রহণে আগ্রহী করে তুলতে হলে অবশ্যই জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা চালানো গেলে মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী হবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ।
তিনি আরও বলেন, দেশের বাইরে করোনার টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এই টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করে দেওয়া গেলে যারা আগ্রহী নন তারাও টিকা নিতে বাধ্য হবেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৯৯৪ জন। টিকা নিতে চট্টগ্রামে রেজিষ্ট্রেশন করেছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৯০৫ জন।
এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় আবেদন করেছেন ৮১ হাজার ৫০০ জন এবং ১৪ উপজেলায় আবেদন করেছেন ৩০ হাজার ৪০৫ জন। প্রথমদিকে টিকা গ্রহণে মানুষের আগ্রহ না থাকলেও দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে চমেক হাসপাতাল সহ সব হাসপাতালে দেখা যায় উপচেপড়া ভিড়। ভিড় সামাল দিতে গিয়ে হুড়োহুড়ির মতো ঘটনাও ঘটছে হাসপাতালগুলোতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
এমএম/এসি/টিসি