চট্টগ্রাম: হত্যা মামলায় আদালত যাবজ্জীবনসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ড দেন কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে। আর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেল খাটছেন মিনু।
সোমবার (২২ মার্চ) সকালে অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞার আদালতে পি, ডব্লিউ মূলে মিনুকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের পেশকার মো. ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর ০৯(৭)০৬ ও জি আর-৪৫৯/০৬। মামলার দায়রা নম্বর ৫৯০/০৮। নগরের কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের জুলাই মাসে একটি বাসায় মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টসকর্মী পারভিনকে গলাটিপে হত্যা করা হয়। এরপর রহমতগঞ্জে একটি গাছের সাঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পারভিন আত্মহত্যা করেছে বলে দাবি করেন গার্মেন্টস কর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পুলিশ দুই বছর তদন্ত শেষে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেদন দেয়। এরপর থেকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হয়।
২০১৭ সালে নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম পারভিন হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। সাজার পরোয়ানামূলে কুলসুম আক্তার কুলসুমী বদলি মিনু ২০১৮ সালের ১২ জুন কারাগারে যান। গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান নারী ওয়ার্ড পরিদর্শকালে মিনু কোনো মামলার আসামি নন বলে জানান।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, কারাগারের সংরক্ষিত হাজতি রেজিস্টার পর্যালোচনা করে দেখা যায় সূত্রস্থ মামলা সংক্রান্ত হাজতি নম্বর ১৫৭১৯/০৭ কুলসুম আক্তার, স্বামী ছালে আহম্মেদ নামীর বন্দি বিজ্ঞ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানামূলে ২০০৭ সালের ২৬ অক্টোর কারাগারে আসেন। তিনি কারাগারে প্রায় ১ বছর ৩ মাস ছিলেন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ চতুর্থ আদালত ২০০৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামিন মঞ্জুর করেন। ওইদিন কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন কুলসুম আক্তার কুলসুমী।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার গৌরস্থান মাঝের পাড়া আহাম্মদ মিয়ার বাড়ির আনু মিয়ার মেয়ে কুলসুম আক্তার কুলসুমী। বর্তমান ঠিকানা কোতোয়ালী থানার রহমতগঞ্জ সাঈদ ডাক্তারের ভাড়া বাড়ি।
জেলে থাকা মিনুর ভাই মো. রুবেল বাংলানিউজকে জানান, গত ২০১৮ সালের রমজান মাসে জাকাতের টাকা ও খাদ্যসাম্রগী দেবে বলে মিনু আপাকে ডেকে নিয়ে যায় আমাদের পাশের মরজিনা আক্তার নামে এক নারী। এরপর আমার বোন মিনু আক্তার আর বাড়িতে ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুজি করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর জাফারাবাদ এলাকায়। আমার বোনের নাম মিনু আক্তার ও স্বামীর নাম মোহাম্মদ বাবুল। আমার বোন মিনু আক্তারের তিন ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে ইয়াছিন (১২)। সে একটি দোকানে চাকরি করে। আরেকজন হেফজখানায় রয়েছে, গোলাম হোসেন। ছোট মেয়ে জান্নাত। আমার বাবার নাম সোলাইমান ও মা সালেহ বেগম।
মিনু আক্তারকে কারাগার থেকে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হজরত ইমাম হোসাইনীয় হাকিমিয়া লোকমানিয়া সিনিয়র দাখিল মাদরাসা ও হেফজখানার শিক্ষক মো. রাসেল হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৯ সালের রমজানে আমরা মিনু কারাগারে আছে জানতে পেরেছি। আমাদের প্রতিবেশী হারুনের মেয়ে পারিবারিক মামলায় কারাগারে যান। সেখানে হারুনের মেয়ে কারাগারে মিনুকে দেখতে পান। হারুনের মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে মিনুর বিষয়ে বলেন। পরে মিনুর সঙ্গে দুইবার সাক্ষাৎ করা হয়েছে। মিনুর জামিন করার বিষয়ে আমাদের কাগজপত্র জোগাড় ও করোনার কারণে এতদিন আদালতে আসতে পারিনি। এখন আমাদের সব কাগজপত্র রয়েছে।
মামলা বিষয়ে শুনানি করা অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপারের নজরে এনেছি একজনের বদলে আরেকজন সাজা ভোগ করছেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার রোববার আদালতের নজরে আনেন বিষয়টি। পি,ডব্লিউ মূলে আজকে মিনুকে হাজির করা হয়েছে। আজ আদালতে প্রাথমিক শুনানি হয়েছে। শুনানিতে বলা হয়েছে এই আসামি মূল আসামি নয়, সেটা পরীক্ষা করে দেখা হবে। পুনরায় আদালত খাস কামরায় শুনানি করা হয়। সেখানে মিনুর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, কুলসুম আক্তারের পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করেছে ইকবাল হোসেন নামে এক আইনজীবী। যার আপিল মামলা নম্বর ৪ হাজার ২৯৩।
আদালতের পেশকার মো. ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে জানান, আদালত জেলখানার ছবি সম্বলিত রেজিস্টার খাতা তলব করেছে মঙ্গলবার।
বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২১
এমএম/টিসি