ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ পৌষ ১৪৩১, ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিসিএস ক্যাডার হতে ডা. সুমনার ১৮ বছর যুদ্ধ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
বিসিএস ক্যাডার হতে ডা. সুমনার ১৮ বছর যুদ্ধ ডা. সুমনা সরকার।

চট্টগ্রাম: লায়ন্স দাতব্য চক্ষু হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. সুমনা সরকার বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডার হতে যুদ্ধ করে চলেছেন ১৮ বছর ধরে। স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি এসে এখন অপেক্ষা করছেন সেই সুসময়ের।

কেন এত সময় পার হলো- বাংলানিউজকে এমন প্রশ্নের উত্তর জানালেন ডা. সুমনা। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণ না করে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া থেকে বাদ দেওয়া হয় তাকে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে অবশেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর পেয়েছেন পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি।

কর্মসূত্রে চট্টগ্রামে থাকলেও ডা. সুমনার বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বল্লা ইউনিয়নে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. অমল কৃষ্ণ সরকার মৃত্যুবরণ করেছেন ২০১৮ সালে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আবদুল আহাদ স্বাক্ষরিত সনদপত্র, ২০০৩ সালের ২১ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সাময়িক সনদ।  

ডা. সুমনা সরকার বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হই। বাবা ছিলেন কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল। ১৯৯৭ সালে এমবিবিএস পাস করার পর ২০০০ সালে ২৩তম বিসিএস-এ অংশ নেই। প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছি। পরে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার ধাপও পার হয়েছি। কিন্তু বাবার মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণ করা হয়নি এবং আমার ভাইভাও নেওয়া হয়নি’।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডা. অমল কৃষ্ণ সরকারের পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে মতদ্বৈততার কারণে ডা. সুমনার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওই সময় ভাইভা দিতে পরীক্ষার আগের দিন পিএসসি থেকে অনেককে নতুন অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়। যারা সেই কার্ড পেয়েছে, তারা ভাইভা দিয়েছে। আমার মতো আরও বেশ কয়েকজন বঞ্চনার শিকার হয়ে আদালতে রিট করেছিল। তারা ন্যায়বিচার পেয়েছে। কিন্তু তখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অন্তঃসত্ত্বা থাকায় আদালতে যাইনি’।

একাত্তরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম ১৮ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা নিয়ে গঠন করেন কাদেরিয়া বাহিনী। ওই বাহিনীর সদস্য ছিলেন ডা. সুমনার বাবা ডা. অমল কৃষ্ণ সরকার। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবাও দিয়েছেন তিনি। ডা. সুমনার স্বামী অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, প্রবাসী ছোট বোন ও বড় বোনের মেয়েসহ পরিবারের অনেকে চিকিৎসা পেশায় জড়িত আছেন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিসিএস দেওয়ার পর জন্ম নেওয়া সন্তান প্রিয়ংকর দাশও এখন পড়ছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে।

ডা. সুমনা ২০০৯ সালে তার মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলার রায় তার পক্ষে আসে। কিন্তু পিএসসি’র পক্ষ থেকে আপিল করা হলে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি হয় এবং আদালত পিএসসিকে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দেন।  

ডা. সুমনা জানান, ‘রায় পেয়ে গত ১ জুন পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে ভাইভা নেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। ৩০ জুন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আদালতের রায় মেনে সুবিধাজনক সময়ে ভাইভা গ্রহণ করা হবে। এ পর্যন্ত আসতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার আদালতে দৌড়াতে হয়েছে অনেকদিন। আমার এই যুদ্ধে পাশে ছিলেন প্রয়াত বাবা, স্বামী এবং সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. মোতাহার হোসেন। সরকারি চাকরির বয়স আছে ৮-৯ বছর’।  

মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে ডিপ্লোমা, ফেলোশিপ করেছি চক্ষুবিজ্ঞানে। আনুষ্ঠানিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন সংসার, চাকরি সামলাতে হচ্ছে। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। ১৮ বছর পর এসে ভাইভার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া কঠিন। পিএসসি চাইলে আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমাকে নিয়োগ দিতে পারে। সত্যিই যদি নিয়োগ পেয়ে যাই- তবে সবার আগে খুশি হবেন আমার প্রয়াত বাবা’।

এ মামলায় নিযুক্ত অ্যাডভোকেট মো. মোতাহার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ডা. সুমনা সরকারের বাবার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির মূল সনদ দেখে পিএসসি তাকে নিয়োগ দিতে পারতো। কিন্তু তার সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করেনি। মনোবল ছিল বলেই তিনি দীর্ঘসময় পর ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২১
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।