ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাগরিকা স্টেডিয়ামে দর্শক ফিরলেও ব্যবসা মন্দা হকারদের

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
সাগরিকা স্টেডিয়ামে দর্শক ফিরলেও ব্যবসা মন্দা হকারদের ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: দীর্ঘ ৭৯৫ দিন পর দর্শক ফিরেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। মাঠের খেলায় দর্শক ফিরলেও ব্যবসা সেভাবে ফিরেনি হকারদের।

 

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর)  সকাল থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ-পাকিস্তানের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় খেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমাণ হকাররা।

স্টেডিয়াম অভিমুখী সড়কের দুইপাশে পতাকা, রিস্ট ব্যান্ড, হেড ব্যান্ড, জার্সি, খেলনা বাঘসহ নানান জিনিসপত্র বিক্রি করছেন তারা।

কিন্তু যে আশা নিয়ে এসেছেন, গত তিনদিনে সেটি পূরণ হয়নি বলে জানিয়েছেন হকাররা।  

হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার কারণে মাঠে দর্শক সেভাবে আসছে না। আবার টেস্ট ম্যাচ হওয়ায় দর্শকের সেই স্রোতও নেই। মাঠে দর্শক বাড়লে বাড়ে বেচা-কেনা। গত তিনদিন যাবত আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি।

তবে যেসব দর্শক মাঠে আসছেন, তাদের কেউ কেউ কিনছেন লাল-সবুজের জার্সি। কাপড়ের মানের ওপর নির্ভর করে এসব জার্সি ১৮০ থেকে ৪০০ টাকায়, আকারভেদে পতাকা ৩০, ৫০, ১০০ ও  ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন হকাররা। এছাড়া হকাররা খেলনা বাঘ বিক্রি করছেন ১৫০ টাকা, রিস্ট ব্যান্ড ২০ থেকে ৪০ টাকায়।

ঢাকার মিরপুর এলাকায় দীর্ঘ বিশ বছর যাবত জার্সি বিক্রি করছেন সিন্টু মিয়া। চট্টগ্রামে দর্শক ফিরেছে এমন খবরে তিনি জার্সি বিক্রি করতে চলে এসেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচ উপলক্ষে ৩০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে চট্টগ্রামে এসেছি। গত তিনদিন ৬ হাজার টাকার জার্সি বিক্রি করেছি। কিন্তু হোটেলে থাকা-খাওয়ার পেছনেই তো অনেক টাকা চলে যায়। আনুষঙ্গিক আরও খরচ আছে। বিক্রি আরও বেশি হলে খরচ পুষিয়ে লাভও হতো’।  

ফোরকান নামের আরেক ভাসমান হকারকে দেখা গেছে ক্যাপ, রিস্ট ব্যান্ডসহ নানান কিছু বিক্রি করতে। তার কণ্ঠেও ছিল হতাশা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আব্বা ও আমি মিলে বেশকিছু মালামাল নিয়ে গত তিনদিন ধরে মাঠের আশপাশে পড়ে আছি। কিন্তু যে আশা নিয়ে মালামাল ক্রয় করে এখানে বিক্রির জন্য এসেছি, সেটি এখনও পূরণ হয়নি। বেশিরভাগ মালামাল অবিক্রিত থেকে গেছে’।

চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেই ঢাকা থেকে চলে আসেন মো. জসিম উদ্দীন। ২০ বছর ধরে এটিই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। তবে করোনার কারণে গত দুই বছর সেই চেনা দৃশ্যে ছেদ পড়ে। এবার দর্শক ফেরায় বড় আশা নিয়ে জার্সি বিক্রি করতে এসেছেন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ব্যবসা কেমন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রথম দিন শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় মোটামুটি ভালো জার্সি বিক্রি হয়েছে। তবে দ্বিতীয় দিন একেবারেই ব্যবসা হয়নি। রোববার সকালেও তেমন বিক্রি হয়নি। সবমিলিয়ে তিনদিনে দুই শয়ের মতো জার্সি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়ায় অনেক টাকা খরচ।  

এই হকারদের অনেকেই পাকিস্তানের সমর্থক খেলা দেখতে আসবেন এমন ভাবনায় পাকিস্তানের জার্সি–পতাকাও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মাঠে পাকিস্তানের জার্সি–পতাকা প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করায় সেই জার্সি-পতাকা বিক্রি করতে পারছেন না। নাম প্রকাশ না করে এক হকার সেটিই বলছিলেন বাংলানিউজকে, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমাদের সবকিছুই বিক্রি করতে হয়। পাকিস্তানের জার্সি বিক্রি করার জন্য ঢাকা থেকে এনেছি। কিন্তু জার্সিগুলো হোটেলে রেখে দিতে হয়েছে। যার কারণে বেচা-কেনা কম হয়েছে’।

অবশ্য এর মধ্যেও কোনও কোনও দর্শক কিনছেন বাংলাদেশের পতাকা-জার্সি। বন্ধুদের নিয়ে নোয়াখালীর মাইজদী উপজেলা থেকে খেলা দেখতে এসেছেন মো.নেওয়াজ। জার্সি কেনার সময় এই তরুণ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দর্শক ঢুকতে দিচ্ছে শুনেই নোয়াখালী থেকে এলাম। বাংলাদেশের ভালো কিছু হোক তা তো চাই। বাবর আজম কেমন খেলবে সেটিও দেখতে চাই। ’

ওমরগণি এমইএস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র আল আমিন শুধুই বাংলাদেশের সমর্থক। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে খেলা দেখার আনন্দ অন্যরকম। দীর্ঘদিন পরে মাঠে আসতে পেরে ভালো লাগছে। হার-জিত যাই হোক, বাংলাদেশকে আজীবন সমর্থন দিয়ে যাব’।

দর্শক সমাগম কম থাকায় স্টেডিয়ামের আশপাশের ছোট ছোট খাবারের দোকান, চটপটি ও ফুচকার  দোকান এবং চায়ের স্টলেও আশানুরূপ বেচা-কেনা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সব ব্যবসায়ীই বলেছেন একটি কথা- বাংলাদেশ ভালো খেললেই বাড়ছে দর্শক, তাতে বাড়ছে বেচাকেনা। সেজন্য মুমিনুল হকের দলের ভালো খেলার প্রার্থনাটা শুধু বাংলাদেশি দর্শকের নয়, এই হকারদেরও।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২১
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।