চট্টগ্রাম: অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন আদালতে আত্মসমর্পণ করে চারটি আবেদন করেছিলেন।
সোমবার (২৩ মে) সকালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি আবেদনগুলো করেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। দুদকের পক্ষে বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, নগরের কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা এলাকার একটি ছয়তলা বাড়ি প্রদীপ কুমার দাশ ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপন করার জন্য শ্বশুরের নামে নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ওই বাড়িটি প্রদীপ দাশের শ্বশুর তার স্ত্রী চুমকি কারনের নামে দান করেন। দানপত্র দলিল হলেও বাড়িটি প্রদীপ দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারন কর্তৃক অর্জিত। আয়কর রির্টানে আসামি চুমকি কারনের কমিশন ব্যবসা এবং বোয়ালখালী উপজেলায় ১০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া পাঁচটি পুকুরে মাছের ব্যবসার যে আয় দেখানো হয়েছে তাও স্বামী প্রদীপ দাশের অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে ভুয়া ব্যবসা প্রদর্শন করে দেখানো হয়েছে। প্রদীপ তার স্ত্রীকে কমিশন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ী সাজিয়ে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার চেষ্টা করেছেন। অভিযোগপত্রে যেসব সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হলো নগরের পাথরঘাটায় একটি ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে সেমিপাকা ঘর, ৪৫ ভরি সোনার গয়না, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস এবং কক্সবাজারে ফ্ল্যাট। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও দুদকের পক্ষে ২৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। তবে এই মামলায় প্রদীপের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিপরীতে উচ্চ আদালতে করা একটি আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়ায় ঐদিন সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়নি। গত ৪ এপ্রিল আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
চুমকি কারনের আইনজীবী রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারন আদালতে আত্মসমর্পণ করে চারটি আবেদন করেছিলেন। আবেদনগুলো হল- চুমকি কারন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন, চিকিৎসা ব্যবস্থা, চুমকির পক্ষে সাক্ষীদের রিকলের এবং চুমকি পলাতক থাকার কারণে সম্পদ বাজেয়াপ্রাপ্ত হয়েছিল, সম্পদগুলো অবমুক্ত করা। আদালত তিনটির শুনানি করেছেন। একটি আবেদন পেন্ডিং রেখেছেন।
তিনি বলেন, চুমকি কারনকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে আদেশ দিয়েছেন। চুমকি কারনের পক্ষে সাক্ষীদের রিকলের আবেদনও নামঞ্জুর করেন। চুমকি পলাতক থাকার কারণে সম্পদ বাজেয়াপ্রাপ্ত হয়েছিল, সম্পদগুলো অবমুক্ত করার জন্য আবেদনটি শুনানির জন্য পেন্ডিং রেখেছেন আদালত।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম চৌধুরীকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত ও রতন চক্রবর্তী।
২০২০ সালের ২৩ অগাস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন- ২০১২ এর ৪(২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়। ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ পাঁচ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে দুদকের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাটির এজাহারভুক্ত সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। ২০২১ সালের ২৯ জুন প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন আদালত। ২০২১ সালের ২৬ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হয়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
এমআই/টিসি