কলকাতা: ঢাকা সফরের পর সোমবার কলকাতায় পা রাখেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম স্থপতি এমিলিয়ানো মার্তিনেস। মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় তাকে নিয়ে যাবতীয় অনুষ্ঠান।
এদিন সকাল থেকেই সায়েন্স সিটি সংলগ্ন মিলনমেলা অডিটোরিয়ামে তাকে একবার চোখের দেখা দেখতে উপচে পড়েছিল ভিড়। আর সেই ভিড়ে মিশে ছিলেন সাধারণ আর্জেন্টিনা সমর্থক থেকে ভারতের সাবেক ফুটবলাররা। আর তারা মঞ্চে উঠে পড়তেই চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ভারতের দুই শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সেখানেই তাকে সম্মান জানায়।
আগেই ঠিক হয়েছিল কলকাতায় মনে রাখার মতো এক অনুষ্ঠানে বরণ করে নেওয়া হবে কাতারে বিশ্বকাপ জিতে আসা এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে। ইস্ট-মোহন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী কর্তাদের পাশে বসিয়ে মার্তিনেস মিলিয়ে দেবেন কলকাতার সঙ্গে বিশ্ব ফুটবলকে।
শিল্পপতি ও স্পোর্টস প্রোমোটার শতদ্রু দত্তের দাওয়াতে কলকাতা আসেন মার্তিনেস। সম্ভবত তার তৈরি সেই চিত্রনাট্য, মোটেই মেলেনি স্ক্রিপ্টের সঙ্গে। মার্তিনেস মিলনমেলা প্রাঙ্গণে ‘তাহাদের কথা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পৌঁছনোর পরেই ঠুনকো নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল অনেক কিছু। গেট খুলতেই সমর্থকদের হুড়াহুড়ি-ঠেলাঠেলিতে মঞ্চের ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। এমন অব্যবস্থাপনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল নজরুলের মঞ্চে সঙ্গীতশিল্পীর কেকের ঘটনা।
ভিআইপি পাসের সঙ্গে এদিনের অনুষ্ঠানের টিকিটমূল্য ছিল চার হাজার রুপি। কিন্তু গেটে টিকিট দেখিয়ে ঢোকাবে এমন কেউ ছিল না। কিছুটা দায়িত্ব নিল কলকাতা পুলিশ। তাদের অভিযোগ করতে শোনা, কেন তারা এ দায়িত্ব নেবে! এটা আয়োজক কমিটির দায়িত্ব। বাইরে তখন লম্বা লাইন। মিলনমেলায় মার্তিনেস আসতেই নিরাপত্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে কলকাতা পুলিশ। সুযোগ বুঝে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়েন টিকিটবিহীন সমর্থকরা।
মার্টিনেজকে একবার কাছ থেকে দেখতে চেষ্টার কসুর করেননি ভক্তরা
। তারকা মঞ্চে উঠতেই ক্রমশ এগোতে শুরু করে দর্শকাসনে থাকা সমর্থকের ঢল। যার ফলে এক সময় সামনের দিকের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। তবে সে সময় কোনো রকম পরিস্থিতি সামাল দেয় কর্মরত কলকাতা পুলিশ বাহিনী।
এমনকি মার্তিনেস যে মঞ্চে ছিলেন, সেলফি তোলার আবদারে দর্শক তাতে উঠে যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটল। ধাক্কা মেরে নামিয়ে দেওয়া হলো মঞ্চ থেকে। একই রকম অবব্যস্থাপনা দেখা গেল প্রেস কর্নারে। সাংবাদিকদের মঞ্চে ওঠে পড়েন সমর্থকরা। প্রবল হুল্লোড়ে মঞ্চ ভেঙে পড়ারও উপক্রম হয়। পরে কলকাতা নারী পুলিশেরা তা সামাল দেন।
শুধু তাই নয়, মার্তিনেসের সামনে ভুলভাবে উপস্থাপন ঘটল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দুই প্রধানেরই। জায়ান্ট স্ক্রিনে ব্যবহার করা হলো শতাব্দী প্রাচীন দুই ক্লাবের পুরনো লোগো। প্ৰথমে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা মার্তিনেসকে সংবর্ধনা জানান। বিখ্যাত আর্জেন্টিনীয় গায়ে লাল-হলুদ জার্সি চাপিয়ে নেন ইস্ট কর্তারা। মার্তিনেসের মুখে শোনা যায়, ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’ স্লোগান। এরপর মোহনবাগান কর্তারাও সংবর্ধনা জানান তাকে। একইভাবে ‘জয় মোহবাগান’ শোনা যায় মার্তিনেসের কণ্ঠে।
তবে তাল কাটে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার খানিক আগে। উপস্থিত থাকা সাবেক খেলোয়াড়রা মার্তিনেসের সঙ্গে সেলফি তুলতে হঠাৎই মঞ্চে উঠে পড়েন। কারও কারও সঙ্গে বউ-বাচ্চাও ছিল। ওই ভিড়ের চাপে রীতিমতো বন্দি হয়ে যান তারকা গোলকিপার। তবে আয়োজকরা কেউই কোনওরকম অব্যবস্থার অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলেছেন, পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গোটা অনুষ্ঠানই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো সমস্যা হয়নি।
এদিকে অনুষ্ঠান শেষে বাইরে বেরোনোর পর সেখানে ঘটে আরেক কাণ্ড। মার্তিনেস যখন মিলনমেলা থেকে বের হয়ে হোটেলের উদ্দেশে রওনা দেবেন, ঠিক সেই সময় ঘটে এক ঘটনা। তাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন সমর্থকরা। সেখানে দেখা মিলল না নিরাপত্তরক্ষীর। এতটাই মার্তিনেসের কাছে চলে আসেন সমর্থকরা, যার জেরে তার গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। শেষে পুলিশ মার্তিনেসকে ঘিরে ওই গাড়ির বদলে পুলিশের গাড়িতে করে সেখান থেকে বের করেন।
অনেকেই ভেবেছিলেন, এই অবস্থায় মার্তিনেস হয়তো আর মোহবাগান ক্লাবে যাবেন না। মুখ পুড়ল কলকাতার। কিন্তু তিনি একজন পেশাদার। ব্যবস্থাপনা তার রক্তে। হাসিমুখে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে পুলিশের গাড়িতে মিলনমেলা প্রাঙ্গণ ছাড়েন। কর্মসূচি অনুযায়ী, গেলেন মোহনবাগান ক্লাবে। সেখানে সোবার্স, পেলে, মারাদোনা নামাঙ্কিত গেটের সূচনা করেন। মোহনবাগান মাঠের চারদিক ঘুরে তিনি গ্যালারিতে ভক্তদের উদ্দেশে বলও ছোড়েন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ৪ জুলাই, ২০২৩
ভিএস/আরএইচ