কলকাতাঃ সোমবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসবে শপথ গ্রহণ করতে চলেছেন নরেন্দ্রভাই দামদোরদাস মোদী। তার নেতৃত্বেই গোটা দেশে বিজেপি জয়ের ফুল ফুটিয়েছে।
জানেন কি দু’টি লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে জিতে আসা নরেন্দ্র মোদী জীবনের প্রথম নির্বাচনে কত ভোটে জয় পেয়েছিলেন? উত্তর হল ১৪ হাজার ৭২৮। গুজরাট বিধানসভার একটি উপনির্বাচনে তিনি প্রথম জয়লাভ করেন।

কিন্তু রাজি না থাকলেও বিয়ে করতেই হয় মোদীকে। “দা প্যারাগান” পত্রিকাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে বিয়ে হয় নরেন্দ্র মোদীর। পাত্রী প্রতিবেশীর এক কন্যা যশোদাবেন।
কিন্তু সেই সময় থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং ধর্মের প্রতি অনুরাগ দেখে নরেন্দ্র মোদীর পরিবারের লোক ভয় পেতেন গার্হস্থ বিমুখ মোদী সন্ন্যাসী হয়ে যাবে নাতো! মোদীর মা হীরাবেন এই চিন্তায় ভীষণ চিন্তিত ছিলেন। আর সম্ভবত সেই চিন্তা থেকেই তাড়াতাড়ি মোদীর বিয়ে দিয়েছিল তার পরিবার। লিখেছেন কিংশুক নাগ।
ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসী জেনে গেছে, নেতা হিসেবে মোদী বেশ শক্ত মনের মানুষ। যতদূর জানা যায়, এই চরিত্র মোদীর ছোট বেলা থেকেই। আমেদাবাদ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ভাটনগর বলে একটি জায়গায় জন্ম হয় মোদীর। বাকি পাঁচ ভাই-বোনের সঙ্গেই সেখানেই তিনি বেড়ে ওঠেন। ভাটনগর হাই স্কুলেই তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন।
ছোট বেলা থেকেই কিছুটা একরোখা ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার সময় থেকেই তার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী ফুটে বেরুতে শুরু করে।

তবে নরেন্দ্র মোদীর বাবা সেই চায়ের দোকান খুলেছিলেন কিছুটা বাধ্য হয়েই। এর আগে পারিবারিক তেলের ব্যবসা করতেন মোদীর বাবা দামোদরদাস। কিন্তু বিরাট সংসারের বোঝা ছিল তার ঘাড়ে। তাই বাধ্য হয়েই তৈরি করেন চায়ের দোকান।
ওই আট বছর বয়েসেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘে যোগদান করেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি পান তার জীবনের প্রথম গুরু বাবু ভাই নায়েককে। বাবু ভাই নায়েক ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রচারক।
সেখানেই আলাপ হয় আরেক নেতা লক্ষণ রাও ইমানদারি বা উকিল সাহেবের। এই উকিল সাহেব মোদীর জীবনকে এক অন্য ধারায় প্রবাহিত করতে সাহায্য করেন। নরেন্দ্র মোদী তার বিভিন্ন সাক্ষাতকারে উকিল সাহেবের নাম করছেন।
এরপরেই আসে নরেন্দ্র মোদীর গৃহত্যাগ করে সন্ন্যাসী হবার ঘটনাটি। তখন তার বয়স ১৭। নরেন্দ্র মোদীর দাবী অনুযায়ী, তিনি সেই সময় তিন বছর হিমালয়ে কাটিয়েছিলেন। এর আগেই তিনি গোটা ভারত ভ্রমণ করেন। তখন তিনি হাজির হয়েছিলেন কলকাতার কাছে স্বামী বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত বেলুর মঠের আশ্রমে।

তবে এখানে আছে আরও একটি মজার ঘটনা। ভোট প্রচারে যখন তিনি কলকাতায় আসেন সেই সময় তিনি যান বেলুরের আশ্রমে। তখনই জানা যায়, বেলুরের বর্তমান প্রধান স্বামী আত্মস্থানন্দ একসময় ছিলেন গুজরাটে। সেই সময়ের যুবক মোদীকে তিনি বলেন কোন দিন তার দাড়ি না কামিয়ে ফেলতে। বেলুরে এসে সেই কথা স্মরণ করেন নরেন্দ্র মোদী নিজেই।
হিমালয় থেকে আবার গুজরাটে ফিরে আসেন নরেন্দ্র মোদী। বেলুরের বর্তমান প্রধান স্বামী আত্মস্থানন্দ তখন গুজরাটে অবস্থান করছিলেন। তিনি নরেন্দ্র মোদীকে দেশের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে উৎসাহ দেন।
সময়টা ১৯৭১। একদিকে মোদী তখন কাজ করছেন তার কাকার ক্যান্টিনে। একই সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের হয়ে। ওই সময় তিনি সঙ্ঘের দেওয়া ম্যানেজমেন্টের শিক্ষা নেন। মনে করা হয়, মোদীর এই বিপুল সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে সঙ্ঘের এই ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং।
এর আগে ৬০ এর দশকে গোটা গুজরাটে ঘুরে বেড়ান নরেন্দ্র মোদী। এই সময় প্রায় গুজরাটের সব গ্রামে হাজির হন মোদী।

এই সময় ভারতে জারি হয় ‘জরুরি অবস্থা’। নিজের রূপ বদলে ফেলেন মোদী। এক পাঞ্জাবী যুবকের রূপে তখন তিনি সংঘের কাজকর্ম পরিচালনা করতেন।
১৯৭৭ সালে গুজরাটে বিজেপি-এর সম্পাদক পদে বসেন মোদী। ১৯৮৮ সালে তিনি বিজেপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে ১৪ মার্চ গুজরাটের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন কেশুভাই প্যাটেল। গুজরাটের রাজনীতিতে সেই সময় থেকেই মোদীর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে।
২০০১ সালে গুজরাটের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর কেশুভাই প্যাটেলকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় নরেন্দ্র মোদীকে। এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মোদীকে। পর পর চারবারের মুখ্যমন্ত্রী পা বাড়ান জাতীয় রাজনীতিতে।
২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয় কংগ্রেস। সেই সময়ই এল কে আদভানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাম উঠে আসে নরেন্দ্র মোদীর। ২০১২ সাল থেকেই শুরু হয় প্রস্তুতি। এই প্রচারে মোদীর একমাত্র ফরমুলা ছিল সুশাসন এবং উন্নতি। যা আকর্ষণ করে যুব সমাজকে।
এর পরের ঘটনা আমারা সবাই জানি। সোমবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। আর সেইদিকেই নজর রাখছে গোটা বিশ্ব।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৪