কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢাকা আসছেন ১৯ ফেব্রুয়ারি।
এদিন সন্ধ্যায় তিনি ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন।
তার বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এ ছাড়া এদিন মমতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, মমতার ঢাকা সফরে তার তরফ থেকে কী কী বিষয় উত্থাপিত হতে পারে, সে বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতোমধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মমতার ঢাকা সফরে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ১০টি বিষয় অগ্রাধিকার পাবে।
এর মধ্যে প্রথমেই পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে পানিপথে ট্রানজিট বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ বিষয়টি মমতার ঢাকা সফরে আলোচনার তালিকায় অগ্রাধিকার পেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন ধারণা দিয়েছেন।
অগ্রাধিকারের দ্বিতীয় বিষয় হিসেবে উঠে আসতে এসেছে, দুই দেশের মধ্যে চলচ্চিত্র বিনিময়। যৌথ প্রযোজনা ছাড়াও চলচ্চিত্র নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পের পরিকাঠামোকে ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। সে কারণে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন মমতার সফরসঙ্গী হচ্ছেন।
তৃতীয় বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে, সীমান্ত এলাকার পরিকাঠামো উন্নতির কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনার কথা জানানো হতে পারে।
চতুর্থ বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে, ঢাকাই শাড়ি আমদানির প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে পশ্চিমবাংলায় বিক্রয় কেন্দ্র দেওয়ার প্রস্তাব করতে পারেন মমতা।
এর সঙ্গে পঞ্চম বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের বাজারে বাংলাদেশের কাঁচাসবজি আমদানির প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে গত এক বছর আগে উৎসাহ প্রকাশ করেছিল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর।
তাদের বক্তব্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গের বাজারে সবজি আমদানি করা হলে যোগান বাড়বে। সেই সঙ্গে সবজির দামও কমে আসবে।
এ ছাড়াও অগ্রাধিকারের তালিকায় উঠে আসতে পারে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে ইলিশ আমদানির বিষয়টি। কারণ, পশ্চিমবঙ্গে পদ্মার ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
তিস্তার পানিবণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তির বিষয়টি এই সফরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সম্ভবত, মমতা এ বিষয়ে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে চুক্তি করার পক্ষে কথা বলবেন।
স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যেই সবুজ সংকেত দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বিষয়টিও তিনি তুলে ধরবেন। এটি ষষ্ঠ বিষয় হিসেবে রাখা হলেও এটিই এই সফরের অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে উঠতে পারে বলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সপ্তম বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে সুন্দরবনের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি। দুই বাংলার মধ্যে এ বিষয়ে সমন্বয়ের প্রয়োজনের কথা আলোচনায় তুলতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অষ্টম বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে, বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে দেখানোর বিষয়টি। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনো প্রস্তাব আসলে, তিনি বিষয়টি কেন্দ্রের গোচরে আনার কথা জানাতে পারেন।
নবম বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে বাংলাদেশের উৎসাহী শিল্পগোষ্ঠীর পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের কথা। তাদের প্রয়োজনে সমস্ত রকম সাহায্যের বিষয়ের কথা জানাতে পারেন মমতা।
বিগত পশ্চিমবঙ্গ বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের বিষয় নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানা গেছে। তাদের সহায়তার কথাটি জানাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গকে পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরতে পারেন তিনি।
অগ্রাধিকার তালিকার দশ নম্বর হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পড়াশুনা করতে আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধার কথা ঘোষণা করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ছাড়াও মমতার সফরের সম্ভাব্য তালিকায় থাকতে পারে দুই বাঙলার মধ্যে লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের বেশি করে আসা যাওয়ার বিষয়টি। কলকাতায় গড়ে তোলা নজরুল তীর্থ সম্পর্কে তিনি জানাতে পারেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি চেয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের আবেগের কথা জানিয়ে সেই প্রসঙ্গে তার ভাবনাচিন্তার কথাও জানাতে পারেন মমতা। আলোচনা হতে পারে, ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের বিষয় ও শান্তি নিকেতনে বাংলাদেশ সরকারের ‘রবীন্দ্র ভবন’ নির্মাণের প্রসঙ্গ নিয়েও।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফ্রেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৫