ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সাদাসিধে বাড়ির উজ্জ্বল ‘দিদি’

স্মিতা সাহা, কলকাতা থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫
সাদাসিধে বাড়ির উজ্জ্বল ‘দিদি’

কলকাতা: ৩০ বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, কলকাতা; পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত ঠিকানা। সমসাময়িককালে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু এই বাড়িটি।

সাক্ষী হয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বহুল আলোচিত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার।

আর হবেই বা না কেন? এই বাড়িতেই যে থাকেন রাজ্যের প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিলোত্তমা কলকাতা নগরীর কালীঘাট এলাকার এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই বর্তমানে আবর্তিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি।

ইটের গাঁথুনি আর মাথার ওপর টালির চাল। বেশ সাদাসিধে করেই সাজানো বাড়িটি। আর ঠিক যেন বাড়ির মতোই অতি সাধারণ পোশাক পরেন বাড়ির বাসিন্দা মমতাও।

সাদা সুতির শাড়ির সঙ্গে পায়ে থাকে হাওয়াই চপ্পল। যেনো সাদাসিধে বাড়ির উজ্জ্বল বাসিন্দা সবার ‘দিদি’ মমতা।

জানা যায়, সংগ্রামী পরিবারের একমাত্র কন্যা মমতা ৭০ এর দশক থেকেই মাত্র ১৫ বছর বয়েসে জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন নিজেকে।

বাবা প্রমীলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয় কর্মী হলেও মা গায়েত্রী দেবী ছিলেন গৃহবধূ।

হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের এই বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গায়েত্রী দেবী। আর মাতৃবিয়োগকে নিজের জীবনের বড় ক্ষতি বলে স্বীকার করে নেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

যোগমায়া দেবী কলেজের ছাত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইসলামের ইতিহাসে’ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। কলকাতার যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজ থেকে আইনেও ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি।

রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ৭০ দশকের কোনো একসময় বনভোজনে গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের যুব শাখার কর্মীরা।

সেখানে ছিলেন মমতাও। ওই সময় তিনি একটি গাছের গায়ে লিখেছিলেন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমপি’।

এনিয়ে যুব শাখার কর্মীদের মধ্যে বেশ আলোচনা হয়েছিল সেদিন। তবে কংগ্রেসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছিলেন-একদিন এই মেয়েই লোকসভার সদস্য হবে।

শেষে বনভোজনের ওই বরিষ্ঠ রাজনীতিকের কথাই যেনো সত্যি হয়েছিল। লোকসভার সদস্য হওয়ার পাশাপাশি বেশ দাপুটে রাজনীতিক হয়েছেন মমতা।
 
১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো লোকসভার কনিষ্ঠ সদস্য হিসাবে সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।

তখন সিপিএম-এর বরিষ্ঠ নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পরাজিত করে পুরো ভারতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন মমতা।

তবে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর টানা লোকসভা নির্বাচনে ২০০৯ পর্যন্ত জয় পান তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কয়েকবার মন্ত্রিসভা থেকেপদত্যাগও করেছেন রাজ্যের আলোচিত নারী রাজনীতিক।

১৯৯১ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও মন্ত্রিসভা থেকে এবং ১৯৯৭ সালে রাজ্যের রেল বাজেট নিয়ে ‘বঞ্চনা’র প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন মমতা।

পরবর্তীতে ওই বছরই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলতে রাজনৈতিক সহকর্মীদের নিয়ে গঠন করেন তৃণমূল কংগ্রেস। যা এরই মধ্যে রাজ্য পেরিয়ে পুরো ভারতের বামফ্রন্ট বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন তিনি।

তৃণমূল কংগ্রেস থেকে লোকসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০২ সালে সংসদ নির্বাচিত হন, হন প্রথমবারের মতো ভারতের রেলমন্ত্রীও।

২০১১ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

২১শে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলাদেশ সফরে আসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে এটা তার দ্বিতীয় সরকারি সফর।

এর আগে গত বছর সিঙ্গাপুর সফর করেছিলেন তিনি। সেটা ছিল প্রায় একযুগ পর মমতার বিদেশ সফর।

বিদেশ যাত্রার প্রসঙ্গ উঠলে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যেই লড়াই সংগ্রাম করতে করতে বেশির ভাগ সময় কেটে গেছে। তাই দেশের বাইরে যাবার কথা ভাবতে পারিনি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম বিদেশ যাত্রা ১৯৮০ সালে। সেই সময়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর উৎসাহে যুব কংগ্রেসের নেত্রী হিসেবে মস্কো যান মমতা।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বয়ে গেছে নানা ঘাত-প্রতিঘাত। এরমাঝেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে লড়াই আর সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন ‘দিদি’ মমতা।

বিভিন্ন সময় সমালোচনা হলেও কর্মকাণ্ড দিয়ে নিজেকে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে প্রমাণ করেছেন তিনি। যার জন্য রয়েছে বিপুল জন-সমর্থন।

শদ ব্যস্ততার মধ্যেও সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন এই রাজনীতিক। আঁকেন ছবিও। ৩৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় মমতার আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের অধিক।

মমতা লিখেছেন- ‘নেই কোন জীবনের চিরস্থায়ী ঠিকানা
এই ভাবেই কাজ করতে করতে যেন রাস্তার কোণে
কোনদিন হয়তো আশ্রয় মিলবে চিরদিনের জন্যে।
অশ্রুসজল প্রতীক্ষা নয়, এ প্রতীক্ষা বাস্তব।
রাস্তার ধুলোই হোক, ধুলোর মত সার্থক। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।