ঢাকা থেকে ফিরে: হুন্ডীর মন্ত্রী গোপনে দূত পাঠিয়েছে শুণ্ডির যুদ্ধের পরিকল্পনা দেখতে। দূত শুণ্ডি পরিক্রমা করে আসার পর মন্ত্রী দূতকে জিজ্ঞেস করলেন কি দেখে এলে? দূত বলছে ‘দেখে এলাম ক্ষেত ভর্তি ধান।
‘খাই খাই’ শব্দটি নিয়ে কারো কারো আপত্তি থাকতে পারে, তবে ‘খাদ্য রসিক’ তকমা নিয়ে কারো আপত্তি থাকবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে প্রসঙ্গ যখন ‘ইলিশ’। বাঙালি মাত্রই খাদ্য রসিক। বাঙালির খুশিতে ইলিশ, উৎসবে ইলিশ, এমনই কি কূটনীতিতেও ইলিশ। আর বলা বাহুল্য বাংলাদেশর মতো রূপোলী ফসল অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেলা।
বাংলাদেশের বাইরে এই স্বাদের অভাব বোধ ব্যক্তিগত নয়, এটি পশ্চিমবাংলার আপামর বাঙালির অভাব বোধ। খোদ পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই একই অভাবে অভাবী।
পানি আগে না মাছ আগে, মাছ আগে না পানি আগে, এটি নির্ধারণ করবে ভবিষ্যৎ। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ,পাকিস্তান এবং পারস্য উপসাগরের কিছু জায়গায় ইলিশ পাওয়া যায়, কিন্তু পদ্মার ইলিশের স্বাদ সারা বিশ্বে মধ্যে সর্ব প্রথম। আর সেই স্বাদ বিগত বারের স্বাদকে হার মানিয়েছে, পদ্মা পারের ‘মাওয়া’ ঘুরতে এসে।
মাওয়া, ঢাকা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের পথ। পদ্মা নদী গোটা বিশ্বে ইলিশের জন্য বিখ্যাত, আর মাওয়া সেই জায়গা যেখানে সদ্য ধরা টাটকা ইলিশ মাছে স্বাদ গ্রহণ করার পক্ষে সবথেকে ভালো জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
পদ্মার গভীর থেকে সদ্য ধরে আনা ইলিশ, নদীর পাড়ে বসে তার স্বাদ গ্রহণের এই সুযোগ একবার পেলে যে কেউ সেখানে বারবার ফিরে আসতে চাইবে। নদীর পাড়ে মাঝিদের জীবন, মাছ ধরে ফিরে তাদের জাল শুকানো কিংবা শীতের শিরশিরানি হাওয়ায় গায়ে শুধু মাত্র একখানা গামছা জড়িয়ে জালের ছেঁড়া অংশের সেলাই করা দেখে মনে পড়তে পারে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের কথা।
পদ্মার এই অংশে আসলে আপনি নদী থেকে ধরা মাছ নদীর পারের ঝুপড়ি দোকানগুলোতে যেমন বলবেন তেমন রান্না করে দেবে। সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলে দেখা যায়, অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছের পসরা সাজিয়ে বসে আসে দোকানিরা। যে মাছ যেরকম ভাবে চাইবেন তাৎক্ষণিক রান্না করে দেয় তারা।
কি খেতে চান দোকানিকে বলে দিন। ভাজা, ভর্তা, ভুনা, ঝাল ঝোল। তাৎক্ষণিক বানিয়ে দেবে তারা আপনার বাছাই করা ইলিশটি দিয়ে। চাইলে আস্তটা কিনেও নিয়ে যেতে পারেন বাসার জন্য। শুধু আপনার পছন্দ মত মাছটি বেছে নেওয়ার অপেক্ষা। অমৃতের স্বাদ তো কল্পনা কিন্তু টাটকা ইলিশের স্বাদ সেই স্বাদকে টেক্কা দেবে একথা সহজেই বলা যায়।
ইলিশ বর্ষার মাছ বলে বিখ্যাত, কিন্তু শীতকালেও মাওয়াতে বেশ বড় মাপের ইলিশ দেখতে পাওয়া গেল। পদ্মার এই অংশে আরেকটি আকর্ষণ আছে, স্পিড বোট। এর মাধ্যমে ভ্যাসেলের থেকে অনেক দ্রুত যাওয়া আসা করা যায়।
স্পিড বোটে চড়ে পদ্মার বুকে দুরন্ত গতিতে ভাসতে ভাসতে মনে হোল ঢাকার এতো কাছের এই জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতেই পারে। পদ্মাকে কেন্দ্র করে পর্যটন শুধু বাংলাদেশ নয় গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠবে।
ইউরোপের বৃহত্তম নদী রাইনকে গিরে যদি বিরাট পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতে পারে তবে কেন পদ্মাকে ঘিরে সেই পর্যটন গরে উঠতে পারবে না। এই একই প্রশ্ন করেছিলাম স্পিড বোটের মালিক এবং চালকদের। তারা জানালেন সরকারি তরফে এই পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে মাওয়া ঘিরে গড়ে তোলা হবে পর্যটন কেন্দ্র।
কিন্তু পদ্মা সেতু তৈরি হয়ে গেলে এই বোট মালিকদের পেশার কি হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তারা জানিয়েছেন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে পদ্মার বুকে পর্যটকদের সফর করতে এই বোটগুলোকেই কাজে লাগানো হবে। আর ভেসেলগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে অন্যান্য জায়গায়। সেখানেই নদী পারাপারের কাজ করবে ভেসেলগুলি। আগামী দিনে মাওয়া জেগে উঠবে পর্যটকদের কলরবে এটাই স্বপ্ন এখানকার মানুষদের। ইলিশের স্বাদ আর এলাকার মানুষদের আন্তরিক আতিথেয়তা নিয়ে ফিরে এলাম। অপেক্ষায় থাকলাম পদ্মা আর পদ্মার ইলিশ নিয়ে নতুন পর্যটন কেন্দ্রের
জেগে ওঠার।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৫
ভি.এস/আরআই