ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামে আজও সওয়ার ৩০ হাজার মানুষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৬
কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামে আজও সওয়ার ৩০ হাজার মানুষ

কলকাতা: কলকাতার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত ট্রাম। শহরের প্রাচীনতম ‘আধুনিক’ বাহন এটি।

প্রায় দেড়শো বছর আগের কথা। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলে। ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আর্মেনিয়ান ঘাট থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত ছিলো রুট।

৭ বছর পর হঠাৎই বন্ধ করে দেওয়া হয় এ পরিষেবা। কারণ যথেষ্ট যাত্রী পাওয়া যেতো না। ব্যবসায়িক দিক থেকেও হয়ে ওঠে অলাভজনক।

এর কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠিত হয় ক্যালকাটা ট্রামওয়ে কোম্পানি। কোম্পানিটি ছিলো মূলত লন্ডনের। তারাই বসায় ট্রাম লাইন। শিয়ালদা থেকে বউবাজার, ডালহৌসি হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। মজার বিষয় তবে সেসময় ট্রাম টানতো ঘোড়ায়।

কোম্পানির এক হাজার ঘোড়া পোষ্য ছিলো শুধু ট্রামগুলি টানবার জন্য। ১৯ মাইল বিস্তৃত ট্রাম লাইন ধরে এ ঘোড়াগুলি ট্রাম টেনে নিয়ে যেত। ১৯০০ সালেরর দিকে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রাম চালানোর পরিকল্পনা শুরু হয়।

১৯০২ সালে ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত প্রথম বিদ্যুৎচালিত ট্রাম চালানো শুরু হয়। এরপর উত্তর থেকে দক্ষিণ গোটা কলকাতাজুড়ে শুরু হয় বিদ্যুৎচালিত ট্রামের যাত্রা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতার মানুষের পছন্দের বাহনে পরিণত হয় ট্রাম। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো ১৯২০ সাল পর্যন্ত কলকাতার একমাত্র গণপরিবহন ছিলো ট্রাম। ১৯২০ সালের পরে কলকাতায় বাস পরিষেবা চালু হয়। ১৯৭২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলকাতা ট্রামওয়েজ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অধিগ্রহণ করে। সেই সময়ের মধ্যেই কলকাতার বিভিন্ন পথে ট্রাম চালনা ও সেগুলিকে রাখার জন্য তৈরি হয় ‘ট্রাম ডিপো’। বর্তমানে কলকাতায় ১২৫টি ট্রাম প্রতিদিন চলাফেরা করে। দুই কামরার ট্রামগুলির গড় দৈর্ঘ্য ৬৪ ফুট, ওজন গড়ে ২০ থেকে ২২ টন।

কলকাতার ট্রামগুলিকে বেশিরভাগ তৈরি করেছে কলকাতার বিখ্যাত বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি। প্রতিটি ট্রাম চালাতে ৫৫০ ভোল্ট বিদ্যুতের দরকার হয়। মুম্বাইসহ আরও কয়েকটি শহরে ট্রাম চললেও বর্তমানে ট্রামের ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছে একমাত্র কলকাতা।

একটা সময় পর্যন্ত বাসের ভিড় এড়িয়ে নিত্যদিনের গন্তব্যে যাওয়ার একমাত্র বাহন ছিলো ট্রাম। কলকাতায় মেট্রো রেল চালুর পর থেকেই ট্রামের প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমতে থেকে। ধীরে ধীরে বেশ কিছু রাস্তা থেকে উঠে যায় ট্রাম লাইন। বিতর্ক শুরু হয় আদৌ এই গতির যুগে ট্রাম শহরে রাখা যুক্তিসঙ্গত কিনা।

এর আগেই ১৯৫৫ সালে গোটা বিশ্বজুড়ে ট্রাম বাতিলের হিড়িক পড়ে। তার আগে ভারতে ১৯৩৩ সালে কানপুর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়া হয়। ১৯৫৫ সালে চেন্নাই, ১৯৬২ সালে দিল্লি, ১৯৬৪ সালে মুম্বাই শহর থেকে তুলে দেওয়া হয় ট্রাম।  

তবে কলকাতাবাসী সবসময়ই ট্রামের পক্ষে থেকেছেন। তাই বারবার পরীক্ষার মুখে পড়েও কলকাতায় রয়ে গেছে ট্রাম। ট্রামে কিছু পরিবর্তন আনতে বিশেষ কিছু ট্রামের ভেতর তৈরি করা হয়েছে রেস্তরাঁ।  
১৪ অক্টোবর, ১৯৫৪ ট্রামে ইতিহাসে একটি কালো দিন। কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন কবি জীবনানন্দ দাশ। ট্রামের ক্যাচারে পিষে যায় তার শরীর। ভেঙে যায় কণ্ঠা, ঊরু ও পাঁজরের হাড়। গুরুতরভাবে আহত কবি জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে আসেন সামনের
একটি চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যরা। ট্রামের তলা থেকে তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। ২২ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।

আগামী দিনে কলকাতায় ট্রাম থাকবে কিনা তা বলবে ভবিষ্য‍ৎ। তবে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি তরফে চিন্তা করা হচ্ছে, অপেক্ষাকৃত কম ভিড় এলাকা ট্রাম চালানো যায় কিনা।

আজও প্রায় ৩০ হাজার কলকাতাবাসীর মূল পরিবহন ট্রাম। সঙ্গে আছে কলকাতার মানুষের ঐতিহ্যের প্রতি আবেগ। ট্রাম ঘিরে সেই আবেগ আর নস্টালজিয়া যতদিন থাকবে ততদিন ট্রাম ইতিহাসকে বুকে নিয়ে কলকাতার রাস্তায় চলতে থাকবে ট্রাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০১৬
এএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।