আগরতলা: শাস্ত্র মেনে সোমবার (১০ অক্টোবর) ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহা নবমীপূজা। এদিন আগরতলার নবমীপূজার মূল আকর্ষণ ছিলো দুর্গাবাড়ির দুর্গাপূজা।
এই মন্দিরে রাজন্য আমল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দুর্গাপূজা। প্রতি বছর এই মন্দিরে নবমী তিথিতে মহিষ বলি হয়, এ বছরও বলি অনুষ্ঠিত হয়। মহিষ ছাড়াও পাঠা বলি হয় এখানে। বলি দেখতে সকাল থেকে মানুষ ভীড় জমান মন্দির প্রাঙ্গণে।
এখানের বিশেষত্ব হচ্ছে মন্দিরের রাজপুরোহিতের পাশাপাশি পূজায় অংশ নেন রাজ চন্তাই। উপজাতি পুরোহিতকে বলা হয় রাজচন্তাই, যিনি রাজপরিবারের খার্চিপূজা, কেরপূজাসহ অন্যান্য বিশেষ পূজার প্রধান পুরোহিত। তিনি বিশেষ পোশাক পরে পূজা করেন।
মন্দিরের দেবী প্রতিমাকে পূজার সময় প্রতিবছর গার্ড অব অনার জানানো হয় রাজ্য পুলিশের তরফে। রাজন্য আমল থেকে এই রীতি চলে আসছে।
এই মন্দিরের আর একটি বিশেষ দিক রয়েছে, আমরা সকলে জানি দেবী দুর্গার ১০ হাত বিশিষ্ট হয় কিন্তু দুর্গাবাড়ির দেবী দুর্গার প্রতিমা দুই হাত বিশিষ্ট। এর একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। বহু পূর্বে রাজন্য আমলে এই মন্দিরেও ১০ হাত বিশিষ্ট দেবী দুর্গার পূজা হতো, তখন একবার দুর্গাপূজার সময় সন্ধ্যা আরতি চলছিলো রাজাও রানী আরতি দেখতে পূজা মণ্ডপে এসে বসেন, রাণী দেবী দুর্গার ১০ হাত বিশিষ্ট বিশাল রূপ দেখে মূর্ছা যান।
এই ঘটনা জানার পর রাজপুরোহিত বিধান দেন যে দেবী দুর্গার দুই হাত বিশিষ্ট রূপেও পূজা করা সম্ভব, তবে বাকি আট হাত প্রতিমার কাঠামোর পেছনে লুক্কায়িত থাকবে। সেই থেকে এখনো এই রীতি মেনে দুই হাত বিশিষ্ট দুর্গার পূজা হয়ে আসছে।
এই মন্দিরের সমস্ত খরচ আসে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে। এর পেছনেও একটি ইতিহাস রয়েছে। ত্রিপুরা যখন রাজন্য শাসন থেকে গণতান্ত্রিক শাসনে রূপান্তরিত হলো তখন তো রাজ্যবাসীর সকল দায়িত্ব চলে যায় সরকারের উপর কিন্তু প্রশ্ন এলো আগে তো রাজা এই মন্দিরের সকল খরচ দিতেন পরবর্তীতে মন্দিরের ব্যয়ভার কে নেবে? তখন স্থির হয় যে রাজ্য সরকার এই মন্দিরের ব্যয়ভার বহন করবে। সেই থেকে শুরু এখনো এই মন্দিরের ব্যয়ভার বহন করছে ত্রিপুরা সরকার।
এই সকল ঐতিহাসিক কারণে ত্রিপুরা আগরতলার দুর্গা মন্দিরের বিশেষ পরিচিতি রয়েছে ত্রিপুরাসহ দেশ জুড়ে। তাই প্রতিবছর দুর্গাপূজায় ত্রিপুরার বিভিন্ন এলাকা, উত্তরপূর্বের বিভিন্ন রাজ্যসহ বাংলাদেশ থেকেও মানুষ আসে এই মন্দিরের দুর্গাপূজা দেখতে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১৬
এসসিএন/আরআইএস/আরআই