কেউ বলছেন ‘না’। আবার অনেকেই বলছেন, ‘হ্যাঁ।
এ নিয়ে দুই দেশের কূটনীতিক মহলেও তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কথা বাংলাদেশকে দিয়েছিলেন তিস্তা চুক্তি হবেই। কিন্তু নিজ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা দেখিয়ে বারবার বাধ সেধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
যারা বলছেন, ‘হলে এবারই হবে। ’ তাদের বক্তব্য, ‘এত বছর তো হলো। একবার কয়েক বছরের জন্য চুক্তি করে দেখা যাক না পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের কি সুবিধা-অসুবিধা হয়। ’
এখনও পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, এ কারণেই হয়তো শান্তি নিকেতনের পথে পা বাড়াচ্ছেন মমতা।
কর্ণাটক থেকে ফিরে সম্ভবত ২৩ মে (বুধবার) এ বিষয়ে রাজ্যের প্রশাসনভবন থেকে ঘোষণা দিতে পারেন তার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
ক’দিন পরেই কলকাতার মাটিতে পা রাখবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকে তারা যাবেন শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতীতে।
সেখানে ‘বাংলাদেশ ভবন’র উদ্বোধন করবেন তারা। এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুই প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরী নাথ ত্রিপাঠী, এখনও অব্দি পাওয়া খবরে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রামকৃষ্ণ মিশন থেকেও থাকছেন একজন।
আরও পড়ুন>>
** প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সম্ভাব্য রূপরেখা
যদিও রামকৃষ্ণ মিশন থেকে কে থাকবেন তার নাম এখনও ঠিক হয়নি। এছাড়া থাকবেন আরও বিশিষ্টজনেরা। এরপর তারা যোগ দেবেন বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। তারপরই শান্তি নিকতেনে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ-ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে একটি সূত্র বলছে, শান্তি নিকেতনের অনুষ্ঠানে মমতা উপস্থিত থাকলেও বৈঠকে তার যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে এখনই এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা জানেন দুই প্রধামন্ত্রী একত্রিত হলে তিস্তা প্রসঙ্গ উঠবেই।
তিস্তা নিয়ে চিরকালই মমতা ভারত সরকারের বিরোধিতা করে আসছেন। সম্ভবত এ কারণেই শান্তি নিকেতনের বৈঠকে যোগ দেবেন না তিনি! এ বিষয়ে ২৩ বা ২৪ মে পটচিত্রটা পরিষ্কার হবে।
ওই অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ওইদিনই কলকাতায় ফিরে এসে নেতাজীভবনে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেখানে এক সময় নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ও তার পরিবারের সদস্যরা থাকতেন। এই বাড়ি থেকেই নেতাজীর অন্তর্ধান হয়।
এছাড়া বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও অন্যতম আদর্শ ছিলেন নেতাজী। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার আহ্বানে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কলকাতার ব্রিটিশবিরোধী ‘ব্ল্যাক হোল আন্দোলন’ এর অন্যতম। বঙ্গবন্ধু সেসময় ছাত্র ছিলেন। থাকতেন কলকাতার বেকার হোস্টেলে। একাত্তরেও মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে নেতাজীভবনকে কেন্দ্র করে।
এখন বাড়িটি নেতাজী মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে এবং নেতাজী সম্পর্কে যাবতীয় গবেষণা এই বাড়ি থেকেই হয়। সেখান থেকে শেখ হাসিনার কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে যাওয়ার কথা।
সেখানে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি বৈঠক হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে শান্তি নিকেতনের অনুষ্ঠান শেষে দিল্লি ফিরে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আর ২৬ মে বাংলাদেশের বিদ্রোহী কবির নামে আসানসোলে প্রতিষ্ঠিত কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মমতা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এবার সেখানেও সমাবর্তন হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির তৃতীয় সমাবর্তনে শেখ হাসিনাকে ডি.লিট সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানেও থাকছেন মমতা।
পড়ুন>>
** শান্তিনিকেতনে দেখা হচ্ছে হাসিনা-মোদী-মমতার
দুই নেতার মধ্যে কোনো বৈঠক হবে কি-না তা জানা যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লড়াকু মনোভাবের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায়কে পছন্দ করেন এবং মমতাও ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুবই ভালোবাসেন। মমতা শেখ হাসিনাকে ‘হাসিনা দি’ বলে সম্বোধন করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সমাবর্তনে যোগ দেওয়া শেষে কলকাতায় ফিরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে যাবেন দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীতস্রষ্টা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি জোড়াসাঁকোতে।
এরপর ইফতার শেষে ঢাকার উদ্দেশে কলকাতা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিস্তা যে একটা বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে-তা নিয়ে আলোচনা চলছে রাজ্যের রাজনৈতিক-বিশ্লেষক মহলে। এখন অপেক্ষা ২৫ তারিখের, দেখা যাক তিস্তা চুক্তির জট খোলে কি-না!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৮
বিএস/এমএ/জেএম