আগরতলা (ত্রিপুরা): ত্রিপুরা রাজ্যে উৎপাদিত পণ্য যেমন আদা, কলা, কাঁঠাল, কচু ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে পণ্য তৈরির জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন অজয় চক্রবর্তী।
আগরতলার বিদ্যাসাগর এলাকার বাসিন্দা অজয় চক্রবর্তী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
তিনি জানান, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ওপর কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেই তার। ২০০১ সালে তিনি একটি ম্যাগাজিনে পড়েন যে, গবেষণায় দেখা গেছে আদা ক্যান্সার প্রতিরোধের কাজ করে। এরপর থেকে তার আগ্রহ তৈরি হয় আদাকে মানুষের কল্যাণে এবং নিত্য ব্যবহার সামগ্রী হিসেবে প্রস্তুত করা যায় কিনা। তখন তিনি চিরাচরিত পদ্ধতিতে আদাকে প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরু করেন। মূলত আদাকে প্রথমে ধুয়ে পরিস্কার করে কুচি কুচি করে কেটে তার সঙ্গে লবন মিশিয়ে শুকিয়ে নেন। এরপর এগুলো থেকে অন্যান্য পণ্য তৈরি করেন বলে বাংলানিউজকে জানান তিনি। কোনো ধরনের কৃত্রিম ও রাসায়নিক সংরক্ষণকর বস্তু (প্রিজারভেটিভ) ব্যবহার করেন না বলেও জানান তিনি।
তার নিজস্ব উদ্ভাবনের কাজে কৃষি কলেজের অধ্যাপকরা যথেষ্ট সহায়তা করেছেন বলেও জানিয়েছেন। তিনি কৃষি কলেজের গবেষণাগারে তার নিজস্ব পণ্য নিয়ে অনেক গবেষণাধর্মী কাজ করেছেন। এর জন্য কৃষি কলেজের অধ্যাপকদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তবে তার পণ্য গুলোর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়নি। তার উৎপাদিত পণ্য এ বছরের শিল্প মেলায় কৃষি কলেজের স্টলে প্রদর্শন করেছেন। স্টলে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উচুস্তরের কর্মকর্তারা খেয়েছেন এবং মতামত বইতে প্রশংসা করেছেন।
এইসব পণ্য তৈরির আগ্রহ এলো কি করে? বাংলানিউজের তরফে করা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরির বাজার ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বেকার যুবকরা যাতে নিজের উদ্যোগে কিছু করতে পারে তার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। তাছাড়া ত্রিপুরা রাজ্য আদা, কলা, কাঁঠাল, কচু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয় কিন্তু এসব কৃষিজাত দ্রব্য দিয়ে বিশেষ কোনো পণ্য তৈরি করা হচ্ছে না। ফলে কৃষকরা এইসব দ্রব্য বেশি পরিমাণে উৎপাদনের প্রতি তেমন আগ্রহী নন। যখন এইসব কৃষিজাত দ্রব্য থেকে পণ্য তৈরি হবে তখন চাহিদাও বাড়বে। কৃষকরা বেশি পরিমাণে উৎপাদনের আগ্রহ পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পা সম্পর্কে তিনি জানান, খুব দ্রুত মুখরোচক আদা-জোয়ান মিশ্রণ বাজারে আনছেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য পণ্যের উৎপাদনের পরিকল্পনা নেবেন বলে জানান। বাণিজ্যিক উৎপাদনে ধীরে ধীরে মেশিন কিনছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই কাজের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেননি।
সম্প্রতি তিনি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার ৬০ জন কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এই চুক্তি অনুসারে কৃষকরা তাদের জমিতে আদা চাষের জন্য কোনো ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহার করবেন না। কৃষকদের উৎপাদিত সব আদা তিনি কিনে নেবেন এবং এগুলো থেকে নানা ধরনের পণ্য সামগ্রী তৈরি করবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২১
এসসিএন/এমআরএ