কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এবার বামেদের স্লোগান ছিল ‘কাঁকড়া বিছের দুটি হুল, বিজেপি আর তৃণমূল। তাই বিজিমূলকে একটিও ভোট নয়’।
কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের জন্মদিন উপলক্ষে পাঠচক্রের আয়োজন করেছে দলটির পার্টি অফিস আলিমুদ্দিন। সেখানে মূল বিষয়ে বলা হয়েছে ‘বিজেপি-তৃণমূল এক নয়। তাই বিজেমূল স্লোগান ভুল’। দলের ক্লাসের জন্য বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে এ ধরনের বাণী। তবে তা নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ওই বাণীতে বিজেপি ও তৃণমূল এক নয় বলাতে দলের অন্দরেই উঠেছে প্রশ্ন।
প্রশ্ন উঠেছে, দলের আগামী লাইন কি হবে তা কি এখনও ঠিক করে উঠতে পারল না সিপিএম নেতারা?
সম্প্রতি বামেদের ভোট তৃণমূলে গিয়েছে বলে রাজ্য কমিটির বৈঠকে মেনে নিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। স্বীকার করেছিলেন, বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূলকেই উপযুক্ত ভেবেছেন মানুষ।
দিনকয়েক আগে দলের কর্মীদের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে আলোচনায় সূর্যকান্ত বলেছিলেন, বিজেমূল স্লোগানের ব্যবহার ভুল হয়েছিল।
এরপরই ওই বাণীতে ‘বিজেমূল’ প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, বিজেপি এবং ভারতের অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এক নয়। বিজেপিকে পরিচালনা করে ফ্যাসিবাদী আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। কিন্তু নির্বাচনের সময় ভুল বার্তা গেছে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। বিজেপি-তৃণমূল মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো কিছু কথা বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে।
সিপিএমের বাণী অনুযায়ী, একুশের ভোটে বিজেপিকে নিশানা করলে লাভ হতো তৃণমূলের। আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার হলে লাভবান হবে বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, তাহলে কীভাবে সিপিএম লাভবান হবে? পার্টির কমরেডরা করবেনটা কি? সেই দিশাই তো নেই বাণীতে।
কলকাতা জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, পার্টি ক্লাসে এখনই এসব বাণী মানছি না। আগে সিলেবাস ঠিক করুক নেতৃত্ব। এ তো দেখি স্ববিরোধিতায় ভরা। এ পর্যন্ত পড়ে বোঝা গেল, বিজেপি-তৃণমূল এক নয়। পরক্ষণেই তৃণমূলের নেপথ্যে আরএসএস রয়েছে দাবি করা হয়েছে ওই বাণীতে।
আবার বাণীতে লেখা হয়েছে, একথা মাথায় রাখতে হবে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে, দলের রেজিস্ট্রেশন থেকে প্রতীক সবই হয়েছে আরএসএস’র নির্দেশে। তাহলে এখন কেন তৃণমূল-বিজেপি এক নয়?
সিপিএমের যুক্তি, বিজেপির চরিত্রই হল যে দলের সাহায্য নেয় তাকে গিলে ফেলতে চায়। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। দুই দলের মধ্যে লড়াই নিছক গড়াপেটা নয়। আমরা বিজেপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে বলেছি, আক্রমণ করেছি। তাতে লাভবান হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু বিজেপি সরকারে না এলেও মনে রাখতে হবে রাজ্যে তারা একমাত্র বিরোধী দল। নির্বাচনে পরাজিত হলেও বিজেপির বিপদ ছোট করে দেখা যায় না। তৃণমূল কংগ্রেসের স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হলে বিজেপি লাভবান হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, সিপিএমের এই বার্তা বোধহয় জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় আপত্তি নেই বলে স্পষ্ট করে দিয়েছে বামেরা। ২৭ জুলাই পূর্ব মেদিনীপুরে একটি অনুষ্ঠানে বিমান বসু বলেছেন, আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছিলেন, রাজনীতিতে চিরশত্রু বলে কিছু নেই। ফলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত আমরা।
এমন যুক্তিতে তৃণমূলের হাত ধরার বার্তাই কি দিলেন প্রবীণ এই বাম নেতা? তবে, তার কথার অর্থ যে মমতার স্বপক্ষেই যাচ্ছে, তা সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নে স্পষ্ট হয়েছে।
সেক্ষেত্রে কি রাজ্যের শত্রু দল তৃণমূলেরও হাত ধরবে বামেরা? সংবাদ মাধ্যমের এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান বসু বলেছিলেন, এই মুহূর্তে ভারতের অগণতান্ত্রিক সরকার ফেলতে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, কচ্ছ থেকে কোহিমা কিংবা বাংলা থেকে বেনারস পর্যন্ত বিজেপি ছাড়া যেকোনো দলের সঙ্গে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।
২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে সম্প্রতি দিল্লি সফর করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই আবহে বামেদের এমন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। তাহলে কি ২০২৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি বনাম বিরোধী জোট? এই দুই মেরুর লড়াই দেখতে পাবে বাংলার মানুষ? সে কারণে তাদের দলের ট্যাগ লাইন পরিবর্তন করছে বামেরা! এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২১
ভিএস/কেএআর