কলকাতা: আগামী ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কলকাতা সিটি নির্বাচন। তারপর দুই-তিন মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় হবে পৌর ভোট।
বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) মালদহে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেছেন, রাজ্যে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাভাষীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি জেলাভিত্তিক স্থানীয় বাঙালিদের চাকরির সুযোগ করে দেওয়ার ওপর জোর দিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গে চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাতে বেশি সুযোগ পায়, সেটা দেখতে হবে। রাজ্যের অল ইন্ডিয়া চাকরির ক্ষেত্রে আমরা কোনও ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে রাজ্যের যে সব নিয়োগকারী সংস্থা রয়েছে, সেখানে বাংলা ভাষা জানা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। অনেক সময় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভিন রাজ্যের কেউ কেউ মেধা তালিকায় প্রথম দিকে থাকেন। সেক্ষেত্রে বাংলার ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়েন। তখন বাংলা না জেনেও প্রথম দিকে থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে যান। সেই সব কর্মীরা কর্মস্থলে গিয়ে স্থানীয় মানুষের কথা বুঝতে পারেন না। সেই পদাধিকারীর ভাষাও স্থানীয়দের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না। ফলে কোনও সমস্যা হলে তা সমাধান করতে দেরি হয়।
এ কথা বলার পরই মঞ্চে বসে থাকা মুখ্যসচিবকে তিনি বলেন, রাজ্যের বাংলা ভাষা জানা প্রার্থীরা যাতে সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পায়, তা দেখবেন। এ ব্যাপারে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে আমি অনেক কাজ করেছি। আগামী দিনে কর্মসংস্থানই হবে আমার প্রধান লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের শেষ জনগণনার তথ্য মতে, পশ্চিমবঙ্গে ৮৬ শতাংশ বাঙালি এবং ১৪ শতাংশ অবাঙালির বাস।
বৃহস্পতিবার (০৯ ডিসেম্বর) বাংলা ভাষা নিয়ে কর্মরত সমাজকর্মী অরিন্দম ভট্টাচার্য্য বলেন, এটা হলে আমাদের কাজ করে যাওয়াটা সফল হবে। জনগণনার নিরিখে অবাঙালির সংখ্যা নূন্যতম হলেও বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে অবাঙালিদের প্রাধান্য বেশি লক্ষ্য করা যায়। পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারি অফিস এবং বেসরকারি অফিসে চাকরির হার সবচেয়ে বেশি অবাঙালিদের। রাজ্য সরকারের চাকরিতে তাদের প্রভাব বাড়ছে।
তিনি বলেন, বাঙালি-অবাঙালি বিভেদ থাকলেও তা নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট কোনও গাইডলাইন নেই। যেমন, ভিন রাজ্যের কেউ যদি বাংলায় বাস করেন, জাতিগতভাবে তিনি অবাঙালি। কিন্তু বাংলা ভাষা লেখা এবং বলার ক্ষেত্রে তিনি সাবলীল। তাকে কি অবাঙালি বলা যাবে? বা দেশ স্বাধীনের পর থেকেই জাতিগতভাবে অবাঙালি পশ্চিমবঙ্গে বাস করছে। তাকেও কিভাবে অবাঙালি বলা যাবে?
অপরদিকে ভাষার দিক থেকে অবাঙালি হলেও কেউ বছরের পর বছর বাংলায় বাস করছেন। ভাষা বাদে বাংলার সব সংস্কৃতি আয়ত্তে করে নিয়েছেন। তার নাগরিকত্বও পরিবর্তন করে ফেলেছেন। এমন কাউকেও কি অবাঙালি বলা যাবে? রাজ্য সরকারের ছুটির তালিকায় বিহারি সম্প্রদায়ের উৎসব ‘ছট পূজা’য় পশ্চিমবঙ্গে দুই দিন ছুটি থাকে। ফলে স্পষ্ট গাইডলাইন নেই বলে বাঙালি-অবাঙালি তথ্য দাঁড় করানো মুশকিলের বিষয়। তবে মুখ্যমন্ত্রীর এ পদক্ষেপকে সাধুবাদ দিতেই হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৪ ঘণ্টা, ১০ ডিসেম্বর, ২০২১
ভিএস/এনএসআর