আগরতলা, (ত্রিপুরা): ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরের সিপাহীজলা জেলার জেলা সদর বিশ্রামগঞ্জ। ছোট এই শহরটির বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে চলে গেছে আট নম্বর জাতীয় সড়ক।
এই সড়ক থেকে পূর্ব দিকে রাস্তা ধরে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই জনজাতি অধ্যুষিত বরকুরবাড়ি গ্রাম। রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মার নির্বাচনী ক্ষেত্র বিশ্রামগঞ্জ বিধানসভায় পড়েছে।
ত্রিপুরা সরকারের বায়োটেকনোলজি দপ্তরে অধীনে যে, নয়টি বায়োভিলেজ রয়েছে এর মধ্যে একটি হচ্ছে বরকুরবাড়ি গ্রাম। আজ থেকে এক বছর আগে এই গ্রামটিকে বায়োভিলেজ হিসেবে নিয়েছে বায়োটেকনোলজি দপ্তর। পরিবেশের কোন ক্ষতি না করে গ্রামীণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা বাস্তুতন্ত্রের উন্নয়নের দিকটিও নজরে রাখা হয় বলে জানান উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা।
বায়োটেকনোলজি দপ্তরের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার অঞ্জন সেনগুপ্ত বরকুরবাড়ি বায়োভিলেজ সম্পর্কে জানান, এই গ্রামে মোট ৪৯টি পরিবারের ৮০ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। তাদের সবাইকে বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সুবিধা মত উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা চাষ করতে আগ্রহী তাদের বায়োটেক কিট দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে জৈব সার, জৈব কীটনাশক, স্প্রে মেশিন, কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে ফসল-সবজি রক্ষা করার জন্য ইয়েলস্টিকি ট্যাপ। সুবিধাভোগীদের মধ্যে যাদের কৃষিকাজ করার জায়গা রয়েছে তাদেরকে সোলার পাম্প বা সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প দেওয়া হয়েছে। এমন ১২ জন সুবিধাভোগীকে ১২টি সোলার পাম্প দেওয়া হয়েছে। এই পাম্পের সুবিধা ১২ জনের সঙ্গে সঙ্গে আশ-পাশের চাষিরাও নিতে পারছেন। যাদের ন্যূনতম তিনটি গরু রয়েছে তাদের প্রত্যেক্ষের বাড়িতে জৈব গ্যাসের ইউনিট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির গবাদিপশুর গোবর থেকে তারা গ্যাস তৈরি করে রান্নার কাজে ব্যাবহার করতে পারছেন। একটি জৈব গ্যাসের ইউনিট থেকে দৈনিক দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা রান্নাবান্নার কাজ করা যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে যেমন গ্যাস সিলিন্ডারের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমছে তেমনি আর্থিকভাবে সাশ্রয় হচ্ছে।
নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য তাদেরকে মাশরুম চাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেসঙ্গে চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মাধ্যমে হাঁস, মুরগি, ছাগল এবং শুকরের ছানা দেওয়া হয়েছে। সেসঙ্গে তাদের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি লাইট এবং ফ্যান দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মাসিক বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। যেসব সুবিধাভোগীর পুকুর রয়েছে, তাদেরকে পোনা মাছ, মাছের খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ভারত সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও এনজিসি তাদের সিএসআর ফান্ড থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন অঞ্জন সেনগুপ্ত। এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী সুমিতা দেববর্মা, সেলিনা দেববর্মারা জানান, হাঁস, শুকর, বৈদ্যুতিক বাতি, পাখাসহ আর অনেক সামগ্রী পেয়েছেন। এই সামগ্রগুলো পাওয়ায় তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এজন্য তারা রাজ্য উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা এবং জৈব প্রযুক্তি দপ্তরকে ধন্যবাদ জানান।
এই এলাকার আরেক বাসিন্দা গুরুদাস দেববর্মা বলেন, এলাকাটি কৃষি নির্ভর। তিনি নিজে জীবনের বেশির ভাগ অংশ বৃষ্টি নির্ভর কৃষি করে কাটিয়ে দিয়েছেন। ফলে জমিতে বছরে এক ফসল করার পর আর ফসল করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এখন সারাবছর ধরে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে। সেচের ব্যবস্থা হওয়ার জন্য। সুইচ টিপলেই পানি আর পানি, নেই কোন বিদ্যুৎ বিল। তাদের ঘর-বাড়ি দেখে বোঝা যায় অর্থনৈতিকভাবে তারা সচ্ছল। প্রতিটি ঘরেই রয়েছে রঙিন টেলিভিশন, দামী মোটরবাইকসহ সৌখিন গৃহস্থালি সামগ্রী। বায়োটেকনোলজি কাউন্সিলের কর্মকর্তরা সুবিধাভোগীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের সুবিধা-অসুবিধা জানেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন। সবমিলিয়ে বায়োভিলেজের কারণে বরকুরবাড়ির মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করেছে বায়োটেকনোলজি দপ্তর।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এসসিএন/এএটি