ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

পশ্চিমবঙ্গে করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, চিন্তিত চিকিৎসকরা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০২২
পশ্চিমবঙ্গে করোনা গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী, চিন্তিত চিকিৎসকরা

কলকাতা: ফের ঊর্ধ্বমুখী পশ্চিমবঙ্গে করোনা গ্রাফ। আশঙ্কা বাড়িয়ে রাজ্যটিতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

সংক্রমণ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। পাল্লা দিয়ে ঊর্ধ্বমুখী করোনা অ্যাক্টিভ কেসও। যা নিয়ে আতঙ্কে রাজ্যটির চিকিৎসকমহল। বারবার করে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু এখনও কেউ সজাগ নন। এভাবে চলতে থাকলে আবারও করোনা গ্রাসে চলে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ।

২০২১ সাল। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরই ওই সময়ে করোনা কবলে চলে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। সেই সময় দৈনিক আক্রান্তে সংখ্যাটা ছিল ৩০-৩৫ হাজারের ঊর্ধ্বে। সবচেয়ে বেশি করোনায় প্রাণ গিয়েছিল কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনায়।

বর্তমানে রাজ্যটিতে দৈনিক সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। শনিবারের (২ জুলাই) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৪৯৯ জন। করোনায় প্রাণ গিয়েছে তিন জনের। এ পর্যন্ত রাজ্যে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ২২২ জন। সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে কলকাতা। শহরে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৫৫০ জন। এরপরই তালিকায় রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (৪২৯ জন), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৯৮ জন) ও হুগলি (৮৮ জন)। এছাড়া, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুরেও সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী।

রাজ্যটিতে শুধু দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি নয়, কয়েকদিন আগেই এক ব্যক্তির শরীরের পাওয়া গিয়েছে ওমিক্রনের দুই অতি সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট। আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি হতে পারে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। অর্থাৎ দুর্গা পূজার সময়। মাস্ক পড়া বন্ধ করে দেওয়া, শারীরিক দূরত্ব না মানা, সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এসব কিছুকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা।

কলকাতার বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেছেন, যেকোনো ভাইরাস পৃথিবীতে এলে তার ৪-৫টা ওয়েভ বা ঢেউ থাকে। করোনা ভাইরাসও ব্যতিক্রম নয়। কতদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব বৃদ্ধি করবে সেটা বলা মুশকিল।

কলকাতার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সরকার বলেছেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সাবধান হতে হবে। তবে ভয় পাবেন না। এখন আমরা অনেক বেশি প্রস্তুত। আমাদের ইমিউনিটি ক্ষমতা বেড়েছে। তবে মাস্কের ব্যবহার বন্ধ করবেন না।

রাজ্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. কাজলকৃষ্ণ বণিক জানান, ওমিক্রন কিন্তু রাজ্যে এখনও আছে। আমাদের বহু মানুষ এখনও পুরোপুরিভাবে টিকা নেয়নি। নিয়ম না মানার প্রবণতাই এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। সামগ্রিকভাবে সবাইকে তিনটি কাজ করতে হবে, মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার ব্যবহার ও টিকা নেওয়া।

কোভিড বিশেষজ্ঞ ড. যোগীরাজ রায় জানান, করোনার সংখ্যা বাড়লে, এভাবেই বাড়ে। গত তিন ঢেউ দেখেছি। তবে আগে অক্সিজেন কমে যাওয়ার রোগীর সংখ্যা বাড়ত। কিন্তু এখন সবই মৃদু উপসর্গযুক্ত। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যারা বুঝতে পারছেন কোভিড হয়েছে, তারা নিজেদের সাত দিনের জন্য ঘরবন্দী করুন।

এছাড়া হাতের কাছে পালস অক্সিমিটার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরের এপ্রিলের শুরুতেই মুখে মাস্ক রাখা বন্ধ হয়ে যায়। ভুলে গেছেন শারীরিক দূরত্বর বিষয়টাও। তার মধ্যে ঈদের পর দুর্গাপূজা। কলকাতার দুর্গাপূজা জায়গা করে নিয়েছে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায়। ফলে এ বছর পূজা উদযাপন নিয়েও রাজ্য সরকারের রয়েছে নানা ধরনের প্ল্যান। যা সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা।

এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ন্ত। এখনই সংক্রমণ আয়ত্তে না এলে আগামীতে ফের বিপদের সম্মুখীন হবে পশ্চিমবঙ্গে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২২
ভিএস/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।