আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ছোট-বড় প্রায় সব রাজনৈতিক দল মাঠে নেমেছে। রাজনৈতিক নেতারা সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
সঠিক হিসাবে নিয়মিত রাজস্ব আদায়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে কারও রিটার্ন খতিয়ে দেখে আয়-ব্যয়ের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেলে আরও বিস্তারিত তদন্তে নামছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে ধনী ব্যক্তির নথি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক সভায় বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের নাশকতা করা যাবে না। এসব কাজে অর্থদাতাদের সন্ধান করা হচ্ছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, কোনো সম্পদশালী ব্যক্তির আয়-ব্যয়ে বড় ধরনের গরমিল থাকলে বা রিটার্নে স্পষ্ট তথ্য না থাকলে ওই ব্যক্তি নাশকতা সৃষ্টিতে অর্থ সরবরাহ করছেন কি না বা কোনো অসাধু কাজে জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখতে এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হবে।
বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে ধাপে ধাপে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া বেশি আয়ের সম্পদশালী ব্যক্তিদের রিটার্ন খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে রিটার্নে তথ্যের গরমিল পাওয়া যাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে এবং নগদে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে, বিদেশ থেকে অর্থ পেয়েছেন কি না, কোন কোন দেশ থেকে, কী খাতে, কে বা কারা অর্থ পাঠিয়েছে তাও দেখা হবে। এসব ব্যক্তি দেশে ও বিদেশে কাকে কোন খাতে অর্থ দিয়েছেন। আয়-ব্যয় অনুযায়ী রাজস্ব পরিশোধ করেছেন কি না, এসব ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তান, পরিচিতজনদের রিটার্নের তথ্যও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।
সূত্র আরও জানায়, শতাধিক ব্যক্তির মধ্যে প্রায় সবাই আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন বলে রিটার্নে উল্লেখ করেছেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে অনেকে তৈরি পোশাক খাত ও এর সহযোগী শিল্পের ব্যবসায়ী, আবাসন খাতের ব্যবসায়ী, অলংকার ব্যবসায়ী, সিরামিক ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, বাড়িভাড়ার ব্যবসা করেন। এসব ব্যবসায়ীর বেশির ভাগই রাজধানীতে এবং বাকিরা বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে বসবাস করেন।
এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘনঘন বিদেশে যাতায়াত করেন। প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে সচ্ছল বলে সমাজে পরিচিত। তাদের কেউ কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য নন। এসব ব্যক্তির একজনও সরাসরি রাজনীতি করেন না। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
এসব ব্যক্তির চলতি ও গত চার করবর্ষের আয়কর নথির তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। এসব ব্যক্তির মধ্যে যারা ব্যবসায়ী, তাদের ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) রিটার্নের তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কশিনারেটে যোগাযোগ করা হবে।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজস্ব ফাঁকিবাজ কারও আয়-ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখার আইনি ক্ষমতা এনবিআরের আছে। তবে করদাতারা আমাদের কাছে সম্মানিত। তারা কর দেন বলেই এনবিআর রাজস্ব আহরণ করতে পারে। তবে রিটার্নে আয়-ব্যয়ের স্পষ্ট তথ্য থাকতে হবে এবং তা অবশ্যই প্রকৃত হিসাবের সঙ্গে মিলতে হবে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন দেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম বেড়েছে। আর এই সুযোগে কেউ নাশকতায় অর্থ সরবরাহ করছেন কি না, তার আয়-ব্যয় সম্পর্কে তদন্তকালে মাথায় রাখা হবে। ’
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, সম্পদশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পরিমাণ বেশি। তাই সম্পদশালীদের রিটার্ন গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এতে রাজস্ব আদায় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে এসব ব্যক্তি ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য আমদানি-রপ্তানি করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখবে। এসব ব্যক্তির কোনো পণ্য বাংলাদেশের দিকে বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া ও হিলিস্থল বন্দর এবং ভারতের দিকে কালিরানী, আংরাইল, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর, বানোবেরিয়া, সুটিয়া, বাঁশঘাট থেকে আমদানি বা রপ্তানি হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণের তথ্যও সংগ্রহ করা হবে। এসব ব্যক্তির আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ যাচাই করা হবে।
এনবিআর সদস্য মইনুল খান বলেছেন, এনবিআর ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সব ধরনের সহযোগিতা করছে। তবে আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে এনবিআর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দেশে নাশকতা করতে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করা হচ্ছে কি না, তাও এনবিআর কঠোরভাবে দেখছে।
সৌজন্যে: দেশ রূপান্তর
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২২