মৌলভীবাজার: হাওরপাড়ে গড়ে তোলা শীতকালীন সবজি চাষাবাদের দৃশ্য আশপাশের প্রকৃতিকেও করেছে সমৃদ্ধ। হাওরের বিলগুলোর এক প্রান্তে জেলেরা ব্যস্ত মাছ ধরায় আর আরেক প্রান্তে সবুজ মিয়ার মতো অনেক কৃষক ব্যস্ত শীতকালীন নানা সবজি চাষাবাদে।
এই শীতকালীন সবজি চাষে সাফল্য পেয়েছেন মালদ্বীপ ফেরত এক যুবক। তার নাম সবুজ মিয়া। মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত মৌলভীবাজারের হাইলহাওর তীরে বিশাল এলাকাজুড়ে ব্যক্তিগত জমিতে চাষ করেছেন শীতকালীন সবজি।
কৃষি বিভাগের কোনো ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই আড়াই একর কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছেন লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কচুরলতি, লালশাক, শসা, টমেটোসহ নানা প্রজাতির শীতকালীন সবজিক্ষেত। শুধু সবজি চাষই নয়, পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন দেশি-বিদেশি গরু-ছাগলের খামারও।
সবজি চাষ আর খামার ঘিরে তাঁর যে আয় হয় তা প্রবাসের বেতনের প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থ বলে জানান ওই কৃষি উদ্যোক্তা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মির্জাপুর ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের যুবক সবুজ মিয়া ২০১৩ সালে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান পর্যটনসমৃদ্ধ দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে। প্রথমে গিয়ে কম বেতনে চাকরি করলেও খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি নিজের উপার্জিত টাকায় সেখানে গড়ে তুলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওই ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন প্রবাসে না থেকে উপার্জিত অর্থ দেশে বিনিয়োগের।
৯ বছরের প্রবাসজীবনের ইতি টেনে ২০২২ সালের শুরুর দিকে চলে আসেন দেশে। ওই যুবকের ক্ষেত-খামার ঘিরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবকেরও হয়েছে কর্মসংস্থান।
সবুজ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে এসেই প্রথমে শখের বসে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বিদেশি প্রজাতির গাভি দিয়ে গড়ে তুলেছেন সবুজ মিয়া ডেইরি ফার্ম নামে গরুর খামার। খামারের বেশির ভাগ গাভী বার্মা ও শাহীওয়াল প্রজাতির। ওই খামার থেকে তাঁর এ পর্যন্ত আয় হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকারও বেশি। পাশাপাশি হাইল হাওরের তীরবর্তী নিজের পৃথক পৃথক ফসলি জমিতে শুরু করেছেন শীতকালীন সবজির চাষাবাদ।
তিনি যে জমিতে লাউ চাষ করেছেন, সেখানে দেখা যায় প্রতিটি ডগার মধ্যে ঝুলে রয়েছে বিশাল আকৃতির বড় বড় লাউ। ক্ষেতের প্রতিটি সারিতে থরে থরে ঝুলছে লাউ। সপ্তাহে দু’দিন গাড়িতে করে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, লতি, লালশাক ও শসা নিয়ে যাওয়া হয় জেলা শহর মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গলসহ আশেপাশের গ্রামীণ হাটবাজারগুলোতে।
সবুজ মিয়া বলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই কৃষির ওপর বেশ আগ্রহী। বর্তমানে তিনি শীতকালীন সবজি চাষ করে সফল। প্রবাসের উপার্জনের থেকেও সবজি চাষ অনেক লাভজনক। এ সবজি বিক্রি করে সবুজ মিয়ার মাসে আয় হয় অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো।
শুধু সবুজ মিয়া নয়, হাইলহাওরের তীরঘেঁষা পুরো কান্দিপারা গ্রামের বেশিরভাগ কৃষকই শীতকালীন সবজি চাষ করে আসছেন বহুকাল থেকে। এসব সবজি পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে দূরের হাটবাজারে বিক্রিও হয়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, গত ১০ বছরে কৃষিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে শীতকালীন সবজি চাষে এ অঞ্চলের কৃষকরা বেশ লাভবান হওয়ায় কৃষিতে অনেকের আগ্রহ বাড়ছে। করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে অনেক প্রবাসী দেশে এসে কৃষি কাজ করে সফল ও লাভবান হয়েছেন।
হাওরপাড়ের ওই কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে আরও পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও বীজসহ অন্যান্য সহযোগিতা করার কথা জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
বিবিবি/এএটি