ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, লাখ লাখ টাকা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় ৫ শতাধিক কৃষক

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
চরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্ব, লাখ লাখ টাকা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় ৫ শতাধিক কৃষক

চাঁদপুর: চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার মীরপুর চরের ১১০ একর কৃষি জমি মাছ চাষের জন্য ইজারা দেওয়া ও কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকার হিসাব পাননি এবং বর্তমানে ইজারার টাকা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন পাঁচ শতাধিক কৃষক।

 

নিয়মানুসারে নিজেদের মধ্য থেকে কমিটি করে ইজারা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

কৃষকরা জানান, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় বেশ কয়েকটি ফসলি জমির চর মাছ চাষের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু মীরপুরের চরের জমির ক্ষেত্রে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পৌরসভার মেয়রকে সভাপতি করে কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বার বার বঞ্চিত করছে। আগের মেয়র মাহফুজু রহমানের মেয়াদকালে ইজারার ৭৫ লাখ টাকার হিসাব পাননি সাধারণ কৃষকরা। সেই সঙ্গে ১৫ লাখ টাকা ঋণ করে গেছেন ওই মেয়র। সেই ১৫ লাখ টাকার ঋণ গত দুই বছর পরিশোধ করেছে কৃষকদের মধ্য থেকে গঠিত কমিটি।

কৃষক মনির হোসেন, ফারুক ও রফিক তালুকদার জানান, বহু বছর এ চরের কৃষকরা নিজেদের মধ্য থেকে প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমে কমিটি করে চরের রক্ষণাবেক্ষণ, সেচ ও মাছ চাষের জন্য ইজারা দিয়ে আসছেন। কিন্তু একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পৌরসভার মেয়রকে সভাপতি করে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য চক্রান্ত করে আসছে। যার ফলে আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা চাই, আমাদের মধ্য থেকে কৃষকরাই কমিটি পরিচালনা করবেন এবং ইজারার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ডিসেম্বর মাসে নতুন কমিটি ও ইজারা দেওয়ার কথা থাকলে চক্রান্তের কারণে এ বছর তিন মাস পার হয়ে গেল।

কৃষকদের মধ্যে থেকে ২০২২ সালে কমিটির সভাপতি ছিলেন মোশারফ হোসেন রুনু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কৃষক সমিতির নিয়মানুসারে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সভার মাধ্যমে আমরা বছরের হিসাব নিকাশ ও দায়িত্ব শেষ করেছি। ওই সভা মুলতবি ছিল পরবর্তী কমিটি করার জন্য। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কয়েকজন জমির মালিক বহিরাগত লোক নিয়ে মেয়রের মাধ্যমে পৌরসভায় বসে কমিটি ঘোষণা দেন। যার ফলে এখন সব কৃষক ক্ষুব্ধ।

চরের জমির মালিক কামাল হোসেন মিজি বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের নিয়ে কমিটি হবে। কৃষকরাও এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বহিরাগত লোকদের হস্তক্ষেপ হলে কৃষকরা আবার তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন। কারণ গত দুই বছর কৃষকরা চর ইজারা দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার বেশি পেয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, মুলতবি সভার পর কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে মেয়র চর এলাকায় আসেন। স্থানীয় মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কৃষকদের সঙ্গে বসে তিনি বলেছেন, এক মাসের মধ্যে কৃষকদের মধ্য থেকে কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে নিজে সভাপতি হয়ে নতুন কমিটি করেছেন। সর্বশেষ তিনি এলাকায় মাইকিং করে ৬ মার্চ মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে চর ইজারা দেওয়ার ডাক দেন। কিন্তু সেখানে কোনো কৃষক উপস্থিত হননি।

পৌরসভা থেকে সম্প্রতি চরের ঘোষিত কমিটির সভাপতি মেয়র মো. আবুল খায়ের। সাধারণ সম্পাদক জমির মালিক মো. ইব্রাহীম বেপারী।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে মেয়রের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়। তিনি স্থানীয় প্রায় ২০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে পৌরসভায় বসে কমিটি করেন। তিনি সভাপতি থেকে ইজারা দেবেন এবং পরে আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, কৃষকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেওয়ায় সমাধানের লক্ষ্যে এ কমিটি করেছি। ইজারা দেওয়া শেষ হলে তাদের মধ্য থেকেই কমিটি করে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।