ঢাকা: সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে প্রচলিত আইনি কাঠামোতে বৈধভাবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করা খুবই কষ্টকর বলে মন্তব্য করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
রোববার (৩১ মাচ) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর বা সংস্থা কর্তৃক পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা না করে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করার লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, রেস্তোরাঁ মালিকদের একক কোনো অভিভাবক নেই। এটা হলো রেস্তোরাঁ মালিকদের একমাত্র সমস্যা। মূলত এটি দেখভালের দায়িত্ব বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের। রেস্তোরাঁ কীভাবে চলবে, এই বিষয়ে তাদের গাইডলাইন ও আইন আছে। আবার রেস্তোরাঁ করতে গেলে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে দুইটি অনুমতি নিতে হয়। আবার সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্সও নিতে হয়। এখন সিটি করপোরেশন দেখতে চায় জেলা প্রশাসনের অনুমতি, আবার জেলা প্রশাসন দেখতে চায় সিটি করপোরেশনের অনুমতি। এখন সমস্যা হচ্ছে, একেকটি আইন হয়েছে, কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন।
তিনি আরও বলেন, আইনের কাঠামোতে বৈধভাবে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট বাদ দিয়েও ৫-৬ হাজার রেস্টুরেন্ট আছে। এখন সবকিছু মেনে ওনারা বৈধভাবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা প্র্যাক্টিস করতে পারেনি, সেই সাপোর্টটাও সরকারি সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া যায়নি। ফলে একটি বিশ্রি অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ভোক্তার অধিকারের ডিজি বলেন, রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এখানে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এটি একটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে সমস্যা আছে। সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমরা যেন এই খাতটিকে সুন্দরভাবে গড়তে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।
এ সময় রাজধানীর আবাসিক ভবনগুলোতে থাকা রেস্তোরাঁগুলোয় এখন থেকে আর খাদ্যের মান তদারকিতে পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা না করে তদারকি দপ্তর ও সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে তদারকি করবে বলে জানান তিনি।
তবে শুধুমাত্র রেস্তোরাঁয় খাদ্যের মান ও নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সমন্বিতভাবে তদারকি করবে তদারকি সংস্থাগুলো। এর বাইরে আবাসিক ভবনে রেস্তারাঁ তৈরির অনুমোদ, লাইসেন্স প্রদান বা অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিজেদের মতোই অভিযান পরিচালনা করবে বলেও জানান ভোক্তার ডিজি।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি বেইলি রোডে একটি ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জনের প্রাণহানির পর সরকরি বিভিন্ন তদারকি সংস্থাগুলো মাঠে কাজ করছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় আবাসিক ভবনে রেস্তোরাঁ ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অভিযান পরিচালনাকারী দপ্তর বা সংস্থা কর্তৃক পৃথকভাবে অভিযান পরিচালনা না করে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত কার্যকরে পরবর্তীতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা করে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়।
এ সময় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগ) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. আবু ইউসুফ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক মো. নিয়াজ আলী চিশতি, ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আঁখি শেখ, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান, বিএসটিআই-এর উপ-পরিচালক মো. রিয়াজুল হক, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি ড. মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ