ঢাকা: পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের জন্য ৭টি প্রস্তাবনা দিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশ (ডিবিএ)।
মঙ্গলবার (১১ জুন) মতিঝিলে সংগঠনের কার্যালয়ে প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা দেন ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে ডিবিএ’র ৭ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তিনি। প্রস্তাবনাগুলো হলো:
১) মূলধনী আয়কে করমুক্তকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন আয়ের ৫০ লাখ টাকার অধিক আয়ের ওপর স্তরভিত্তিক করারোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোন সিকিউরিটিজ বিনিয়োগের সময়কাল ৫ বছর অতিক্রম করলে উক্ত বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ১৫% হারে কর প্রদানের প্রস্তাব করা হয়। গত কয়েকবছর ধরে মন্দা বাজার পরিস্থিতি এবং আর্থিক সংকটে থাকা বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে মূলধন আয়ের ওপর থেকে করারোপের প্রস্তাব রহিতকরণের জন্য আমরা জোর সুপারিশ করছি।
২) ব্রোকারেজের জন্য করহার যৌক্তিককরণ: বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজগুলো দুটি স্তরে কর প্রদান করে। প্রথমত: সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর ০.০৫% এবং দ্বিতীয়ত: কর্পোরেট আয়কর হিসেবে, যেটি বেশি হয় তা চূড়ান্ত কর হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দ্বিস্তরের ব্যবস্থার ফলে মন্দা বাজার পরিস্থিতিতে ব্রোকারদের ক্ষতি করে। কিছু ক্ষেত্রে এই করের হার ৪০% বা তার বেশি ছাড়িয়ে যায়। ব্রোকাররা বাজারের অন্যতম অংশী। বাজারে বিনিয়োগকারী এনে বাজারকে বিনিয়োগ সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারা করে থাকে। ব্রোকারদের আর্থিক সংকট ও অক্ষমতা বাজারের উন্নয়নকে চরমভাবে ব্যহত করে। তাই পুঁজিবাজারকে টিকিয়ে রাখতে রাজস্ব করহার ০.০৫% থেকে ০.০২৫% হ্রাসকরণ এবং কর্পোরেট আয়করকে ব্রোকারেজের জন্য চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করতে সুপারিশ করছি।
৩) মূলধন ক্ষতির ওপর বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা স্পষ্টীকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে মূলধন লাভের ওপর করারোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ মূলধনী লোকসানের ওপর ৬ বছর পর্যন্ত মূলধনী ক্ষতির জের বহন কিংবা সমন্বয় করার বিধান বিদ্যমান রয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে আমরা বিনিয়োগকারীর মূলধন ক্ষতির বিষয়ে থাকা বিদ্যমান আইনের সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা প্রদানসহ এটিকে ৭ বছর পর্যন্ত প্রদেয় আয়করের বিপরীতে বহন বা সমন্বয় করার সুপারিশ করছি।
৪) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ তালিকাভূক্তির রোডম্যাপ: গত ১ দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজ শেয়ারবাজারে তালিকাভূক্তির ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। আমরা পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলিকে তালিকাভূক্ত করার জন্য একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করার অনুরোধ করছি। উক্ত বিষয়ে একটি পরিস্কার রোডম্যাপ দেওয়া হলে বাজার মানসম্পন্ন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজে প্রতিযোগিতামূলক ভালো ব্যবসা তৈরিতে উৎসাহিত হবে।
৫) অতালিকাভুক্ত সংস্থাগুলির জন্য কর্পোরেট করের হার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হারের বাহিরে বৃদ্ধিকরণ: প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত করের হার ৩০% নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করের হার ব্যক্তিশ্রেণির করের হারের নিচে। অন্যদিকে কর্পোরেটের ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে করের পার্থক্য ২.৫% এ নামিয়ে আনা হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির সর্বোচ্চ করহার ৩০%-এর ঊর্ধ্বে অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার নির্ধারণ করা নিয়মিত সম্পূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করহার হ্রাসকরণের সুপারিশ করছি।
৬) নতুন বিও আইডিগুলোকে ৩ বছরের জন্য করমুক্ত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান: সকল নতুন বিও একাউন্টগুলিকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের সীমা সাপেক্ষে ৩ বছর পর্যন্ত সময়কালের জন্য কর বহির্ভূত রেখে পরিচালনা করার অনুমতি প্রদান করা এবং শিক্ষার্থী, সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং প্রবীণ নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বিও হিসাবধারীদের লাভের জন্য (০) শূন্য হারে কর উপভোগ করার অনুমতি প্রদান করা।
৭) মার্জিন লসকে কর ছাড়যোগ্য হিসেবে অনুমতি দেয়া: মার্জিন লস বাজারের উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। দীর্ঘদিন ধরে থাকা এরূপ মার্জিন লসের কারণে অসংখ্য বিনিয়োগ একাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, যা তারল্য সংকটের মুখে গত কয়েকবছরে গুরুতর হয়ে উঠেছে। মার্জিন লসে থাকা এই জাতীয় বিনিয়োগকে আর্থিকভাবে পূনরুদ্ধার করতে এবং বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা এনবিআরকে ঋণদাতাদের জন্য একটি প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কর কর্তনযোগ্য হিসেবে মার্জিন লসের অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৪
এসএমএকে/এমজেএফ