ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মার্চে শুরু নির্মাণ কাজ

আসছে উড়ালপথের মেট্রোরেল

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
আসছে উড়ালপথের মেট্রোরেল

ঢাকা: দরপত্র প্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন সমীক্ষা শেষে এখন কাজ শুরুর অপেক্ষায় মেট্রোরেল। রাজধানীর প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় এই উদ্যোগের নির্মাণ কাজ শুরু হবে মহান স্বাধীনতার মাসেই।

মার্চ মাস থেকে ঢাকাবাসী দেখবেন স্বপ্নের মেট্রোরেলের কাজ।  

মেট্রোরেল হবে সড়কের ওপর দিয়ে উড়ালপথে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মাসেতুর মতোই জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেট্রোরেলের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চালু হলে মেট্রোরেল ঢাকা শহরের একপাশ থেকে আরেক পাশে ঘণ্টায় পঞ্চাশ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে আর কমে আসবে যাতায়াত খরচও। সেই সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়ে থাকার দিন শেষ হবে। ২৪ জোড়া ট্রেন যাওয়া আসা করবে কয়েক মিনিট পর পর।

উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৪০ মিনিটেরও কম।

মেট্রোরেল প্রকল্প বলছে, প্রতি দু’মিনিট পরপর নিকটস্থ স্টেশনে এসে থামবে ট্রেন। টিকিট কাটার বাড়তি ঝামেলা নেই। রুটের নিয়মিত যাত্রী হিসেবে তাদের কাছে থাকবে কম্পিউটার পাস। স্টেশনের মুখে স্থাপিত যন্ত্রে পাঞ্চ করে প্রবেশ করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অত্যাধুনিক ট্রেন নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে দেবে গন্তব্যে।

প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমেই কাজ শুরু হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত, যা চালু হবে ২০১৯ সালে। এরপরের ধাপে মতিঝিলে আসবে মেট্রোরেল। ১৬টি স্টেশনের মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার।

এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি সহযোগিতা পাওয়া গেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার।

মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জেল হোসেন বাংলানিউজকে মেট্রোরেলের সবশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে বলেন, মার্চে নির্মাণ শুরু করতে তাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। ইতোপূর্বে যেসব কাজ হয়েছে তা বিভিন্ন সমীক্ষা ও মাটি পরীক্ষার কাজ। মার্চেই মূল নির্মাণ কাজ শুরু হতে দেখবেন নগরবাসী।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ ব্যাপারে নগরবাসীকে সাময়িক ভোগান্তি সহ্য করে নিতে আহবান জানিয়েছেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মেট্রোরোলের কাজ চলাকালে বৃহৎ স্বার্থে সাময়িক কষ্ট হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মতো দুর্ভোগ হবে না আর চেষ্টা করে হবে জনদুর্ভোগ যাতে সহনীয়তার মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়।

এদিকে মেট্রোরেলের কাজ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে মেট্রোরেলের রুট সরিয়ে নিতে আন্দোলন করছেন কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মেট্রোরেলের কাজ শুরুর জন্য তিন বছর ধরে প্রাক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করে তাদের অনুমোদন নিয়েই রুট এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনেই টিএসসিতে একটি স্টেশন করা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় সংসদ ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা এলাকায় মেট্রোরেলে শব্দ প্রতিরোধক (সাউন্ড প্রুফ) ব্যবস্থা আছে। আর মেট্রোরেল সড়কের ওপর দিয়ে চলে যাবে। ফলে পড়ালেখা বা কোনো সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটবে না।

মন্ত্রী জানান, সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানের সংস্থা জাইকা। এই মুহূর্তে রুট এলাইনমেন্ট চূড়ান্ত আর মার্চে কাজ শুরু হবে। তাই এখন রুট পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

মন্ত্রী আরো বলেন, মেট্রোরেলের আরও দু’টি এমআরটি লাইন ১ ও ৫ এর ফিজিবিলিটি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এ দু’টিতে আন্ডারগ্রাউন্ড সুবিধা থাকছে। দু’টি লাইনের একটি বড় অংশ আন্ডারগ্রাউন্ড সাবওয়ের মতো হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের এলাইনমেন্ট রুট অনুসারে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর হয়ে মতিঝিলের দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে মেট্রোরেল।

২০১২ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) মেট্রোরেল প্রকল্প অনুমোদন পায়। ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট উন্নয়ন প্রকল্পের (মেট্রোরেল) ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বছরের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হয় মেট্রোরেল আইন।

প্রকল্পের ১৬টি স্টেশন থাকবে উত্তরা (উত্তর), উত্তরা (সেন্টার), উত্তরা (দক্ষিণ), পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, হোটেল সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক মোড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৬
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।