ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলানিউজকে এনবিআর চেয়ারম্যান

রুপকল্প বাস্তবায়নে নতুন এনবিআর গড়ছি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৬
রুপকল্প বাস্তবায়নে নতুন এনবিআর গড়ছি

ঢাকা: রাজস্ব উন্নয়নের অক্সিজেন। বিদেশ নির্ভর অর্থনীতি থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে নজর দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ নির্ভরতায় বর্তমান সরকার রুপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে। সে রুপকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজস্ব। করজাল বাড়াতে প্রয়োজন ডিজিটাল ও নতুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠন। বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর রুপকল্প বাস্তবায়ন ও নতুন এনবিআর গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলানিউজের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

‘নতুন এনবিআর’ গঠন সম্পর্কে বাংলানিউজকে চেয়ারম্যান বলেন, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদে বক্তৃতায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘সুশাসন ও উন্নততর ব্যবস্থাপনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা বলেছেন। আমি যোগদানের পর থেকে এনবিআরে ‘সুশাসন ও উন্নততর ব্যবস্থাপনা’ নীতি নিয়েছি। আমার ও আমার সহযোগীদের প্রচেষ্টায় বর্তমানে এনবিআরে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সুশাসন বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি, হয়রানিমুক্ত, করদাতাবান্ধব ও জনকল্যাণমুখী ডিজিটাল এনবিআর গঠিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ অনেক বেড়ে যাবে। হয়রানি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ নিয়েছি। সুশাসন প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের যোগ্য পদে পদায়ন করা হয়েছে।

অংশীজন ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, অংশীজন, বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে হয়রানি রোধের ব্যবস্থা করা করা হয়েছে। করদাতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগ ও আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এডিআর বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, দেশের প্রায় ২৮ হাজার মামলায় ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বকেয়া রয়েছে। এডিআরকে (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) গতিশীল করতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়তায় এর্টনি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিদের নিয়ে প্রথমবারের মতো সেমিনার হয়েছে। প্রধান বিচারপতির আশ্বাসের পর বর্তমানে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও বকেয়া রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরাও সহযোগিতা করছে। মামলার মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব আদায়ে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের সব মহল সন্তুষ্ট।

ভ্যাট অনলাইন সম্পর্কে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে আগামী জুলাই থেকে ভ্যাট অনলাইন কার্যকর করা হচ্ছে। বর্তমানে জিডিপিতে ভ্যাটের অবদান ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ভ্যাট অনলাইন কার্যকর হলে একবছরে জিডিপিতে ভ্যাটের অবদান ১ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। গত একবছরে ভ্যাট অনলাইনে যে কাজ করেছি তা গত চারবছরেও হয়নি বলে বলেছে আইএমএফ। ভ্যাট অনলাইন কার্যকর হলে পুরো ভ্যাট ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে।

পেট্রোলবোমার চ্যালেঞ্জ নিয়েও গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ কোটি টাকার বিপরীতে ১ হাজার ৩৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ করেছি। চলতি অর্থবছরেও ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার বিশাল রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এনবিআরে যে সুশাসন ও উন্নততর ব্যবস্থাপনা বিরাজ করছে তাতে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হবে না।

এনবিআরকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে শুধু রাজস্ব আহরণ নয়, এটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে সরকারের রুপকল্প বাস্তবায়নে এনবিআর গুরুত্বত্বপূর্ণ অংশীজন হয়ে উঠছে বলে জানান নজিবুর রহমান।

রাজস্ব ভবন সম্পর্কে চেয়ারম্যান বলেন, বাজেটের ৮৫ শতাংশ রাজস্ব বোর্ড যোগান দিলেও এনবিআরের নিজস্ব ভবন নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজস্ব ভবনের কাজে গতি আনা হয়েছে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ও করদাতাবান্ধব ৩০ তলা ভবন করা হচ্ছে। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম ৪০ তলা রাজস্ব ভবন করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতি জেলায় নিজস্ব রাজস্ব ভবন করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের রাজস্ব ভবনের জন্য জায়গা দিতে অনুরোধ করেছি।

‘দুষ্টের দমন শিষ্ঠের লালন’ এ নীতি অনুসরণ করে করফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি), শুল্ক ও মূসক গোয়েন্দাকে শক্তিশালী করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শুল্ক গোয়েন্দাকে শক্তিশালী করার ফলে স্বর্ণসহ অন্যান্য চোরাই পণ্য বিপুল আটক হচ্ছে। মূসক গোয়েন্দা মূসক ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী ও জনগণের মধ্যে রাজস্ব সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এনবিআরকে ডিজিটাল করার সর্বশেষ পদ্ধতি হিসেবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রেভিনিউ মনিটরিং করা হচ্ছে। ফলে কর্মকর্তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি ও রাজস্ব আহরণে গতি এসেছে। এছাড়া করদাতা সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের সঙ্গে অংশীজন ও সারাদেশে ব্যবসায়ীসহ সব মহলের সঙ্গে রেভিনিউ ডায়ালগ করা হচ্ছে।

জুলাই থেকে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করা যাবে। ফলে কোন করদাতাকে আর কর অফিসে আসতে হবে না। অনলাইনে সব ধরনের করসেবা পাবেন করদাতা। ইসিআর ও পিওএস ব্যবহার নিশ্চিত করতে অভিযান চলছে।

করদাতাদের উৎসাহিত করতে প্রচলিত ট্যাক্স কার্ড পদ্ধতি পরিবর্তন করে পেশাভিত্তিক পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এছাড়া তরুণ, মহিলা ও সার্বিক এ পদ্ধতিতে ৩০৩ জনকে শ্রেষ্ঠ করদাতার সম্মাননা দেওয়া হবে।

পাঠ্যসূচিতে রাজস্ব বিষয় অন্তভুর্ক্ত, রেডিও, টেলিভিশনে রাজস্ব বিষয়ে প্রচারণা, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল প্রতিষ্ঠানে রাজস্ব বিষয়ক মডিউল পরিবর্তন, কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে মাসিক রিপোর্ট কার্ড চালু, কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র স্থাপন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কর সচেতনতামূলক প্রচারসহ নতুন এনবিআর গঠনে বহু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা করে চেয়ারম্যান বলেন, বাজেট বক্তৃতায় করজাল সম্প্রসারণের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছর ৩ লাখ ২০ হাজার করদাতাকে করজালের আওতায় আনতে সারাদেশে জরিপ চলছে। বেশ ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রুপকল্প বাস্তবায়নে নতুন এনবিআর গড়ছি উল্লেখ করে নজিবুর রহমান বলেন, রুপকল্প বাস্তবায়ন ও দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রুপান্তরিক করতে রাজস্বের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৬
আরইউ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।