ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কার্গো হাউজে চুরির বিষয়ে নীরব বিমান

উর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৬
কার্গো হাউজে চুরির বিষয়ে নীরব বিমান

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো হাউজের আমদানি শাখা থেকে চুরি হচ্ছে একের পর এক বড় চালান। সংখ্যাটাও নিতান্ত কম নয়।

তবে এ বিষয়ে নীরব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।

সবশেষ মার্চের ১৩ তারিখে কোনো উপায়ন্তর না দেখে ওষুধ প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে।

বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড ১৩ মার্চ সচিব বরাবর কার্গো ভিলেজের আমদানি শাখা থেকে ৭৬ হাজার ৯৫০ ডলার (প্রায় ৬১ লাখ টাকা) মূল্যের একটি চালান হারানোর বিষয়ে অভিযোগ করে। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের মাধ্যমে ১৫ জানুয়ারি পণ্যগুলো আমদানি করা হয়। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স টি হোল্ডিংস লিমিটেড ১৭ জানুয়ারি কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু ২০ জানুয়ারি সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ পণ্য পরীক্ষা ও ডেলিভারির জন্য বলা হলে কার্গো শাখার কর্মরত অফিসার জানান, ওই মালামাল পাওয়া যাচ্ছে না।  

একাধিকবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিভিন্ন শাখায় লিখিতভাবে পণ্য উধাও হওয়ার বিষয়টি জানালেও কোনো ফল পায়নি এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড। পরে লিখিত অভিযোগের কপিটির অনুলিপি পাঠানো হয় বিমানের সিইও, কার্গো কমপ্লেক্সের মহাব্যবস্থাপক ও কার্গো কমপ্লেক্সের আমদানি শাখার ব্যবস্থাপকের কাছে।   

প্রতিষ্ঠানটি লিখিতভাবে বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জানায়, ২০ জানুয়ারি কার্গো কমপ্লেক্সের আমদানি শাখার ব্যবস্থাপক বরাবর ৭৬ হজার ৯শ’ ৫০ ডলার মূল্যের চালানটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। ২৫ জানুয়ারি আমদানি শাখার ব্যবস্থাপক বরাবর পুনরায় লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল না পাওয়ায় বিমানের মহাব্যবস্থাপকের কাছে লিখিত চিঠি পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু তাতেও কোনো উত্তর পায়নি এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড।

এর আগে মরিয়ম এন্টারপ্রাইজের ৩৮ লাখ টাকার মোবাইল হ্যান্ডসেট কার্গো কমপ্লেক্স থেকে চুরি হওয়ার বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে লিখিতভাবে জানালেও কোনো উত্তর পায়নি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৫ সালে কয়েক হাজার চালানের পণ্য উধাও হয় কার্গো ভিলেজ থেকে। অথচ এ বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।  

পণ্য চুরি হওয়া ও সঠিক সময়ে না পাওয়ায় আমদানিকারকদের নানা বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী কর্মকর্তা (আইন) মো. মাজহারুল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ৭৬ হাজার ৯শ ৫০ ডলারের যে চালানটি এসছিলো তা আমরা এখনো পাইনি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেহেতু কার্গো কমপ্লেক্সের দায়িত্বে আছে, তাই একাধিকবার জানানোর পরও কোনো সমাধান না পাওয়ায় আমরা বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি চিঠি দিয়েছি। বিমান থেকে সবশেষ আমাদের জানিয়েছে বিষয়টি তদন্তনাধীন। চালানটি কোথায় আছে তাও তারা বলতে পারছেন না। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ততো হয়েছিই, পাশাপাশি যাদের কাছে পণ্য সরবরাহের কথা সেক্ষেত্রেও আমাদের সুনাম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ বিমান কর্তৃপক্ষ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপক (আমদানি) মো. আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকা কাস্টমস হাউজ থেকে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫ হাজার কনসাইনমেন্ট আসে কার্গো ভিলেজে। এসব কনসাইনমেন্টের ৯৬ শতাংশ খালাস হলেও নানা কারণে ৪ শতাংশ খালাস হয় না। আইন অনুযায়ী কোনো পণ্য আমদানির ২১ দিনের মধ্যে খালাস না হলে তার মালিকানা সরকার নিয়ে নিতে পারে। এবং সে অনুযায়ী নিলাম করা হয় সেসব পণ্য। বিমান বাংলাদেশ ছাড়াও ৫৪টি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কনসাইনমেন্ট আসছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৬
ইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।